বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কিন্তু, কে এই ‘আমি’? কেনই বা তাঁর এত ‘আমিত্ব’? যতটুকু জানা গিয়েছে, ‘ভদ্রলোক’-এর বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। বিদেশে থাকেন। ক’দিন আগে দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছিলেন তিনি। তখন মাঝরাত। বিদেশ ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্য। তিনি কিছুতেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যাবেন না। নাছোড় পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের কর্তারাও। তাঁদের ঘাড়েই যে দায়িত্ব যাত্রীদের ১৪দিনের ‘নিভৃতবাস’-এ পাঠানোর। সেই মতো ওই যাত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার নির্দেশে দিয়েছিলেন রাজ্যের এক পদস্থ আমলা। তাতেই চটে ফায়ার ঝাড়খণ্ডের এই ‘কেউকেটা’ যাত্রী। তাঁর সাফ হুমকি, ‘আমি এখান থেকে সোজা ঝাড়খণ্ডে যাব। আমাকে ঠেকায় সাধ্যি কার?’
এটি একটি উদাহরণমাত্র। বিমানবন্দরে প্রতি রাতে এমন বহু ‘আমি’র মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিগমকর্তাদের। ব্যক্তি বিশেষে ‘আমি’র রূপও ভিন্ন। কেউ ধমকাচ্ছেন, চমকাচ্ছেন। কেউ বা বিনয়ী। কেউ আবার খরচের টাকা চাইছেন। কেউ ‘বিস্কুট-কেলেঙ্কারি’র অভিযোগ তুলে তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দিচ্ছেন। তাও আবার নিগমকর্মীদের কাছ থেকে বিস্কুট খেয়ে! কর্মজীবনে এই রকম বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হচ্ছেন নিগমকর্তারা।
লকডাউনের পর বিদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফেরাতে ‘বন্দে ভারত’ প্রকল্প গ্রহণ করে মোদি সরকার। সেই প্রকল্পে দমদম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কিছু বিমান ওঠানামা করছে। রাজ্যের স্পষ্ট নির্দেশ, বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে। এর জন্য কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলাতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খুলেছে সরকার। সেখানে বিনাখরচে থাকা-খাওয়া। আবার হোটেলেও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে সবই নিজের খরচ। বিমানবন্দরে বেশিরভার আন্তর্জাতিক উড়ান অবতরণ করে মাঝরাতে। যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে নিগমের ১০ থেকে ১২ জন কর্মী পালা করে রাত জাগছেন। মাঝে মাঝে তাঁদের সাথ দিচ্ছেন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি মোহন গান্ধী এবং এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
‘বন্দে ভারত’ ঘোষণার পর এখনও পর্যন্ত প্রায় দেড়শো উড়ান নেমেছে দমদমে। নিগমের কর্মীরা বলছেন, ‘ধমকানো-চমকানো ছাড়াও বহু যাত্রী অতি বিনয়ী। কেউ কেউ কোয়ারেন্টাইনে যাবে না বলে কেঁদেও ফেলেন। কেউ আবার রাত-বিরেতে বিদেশে থাকা বাবা-মা অথবা আত্মীয় স্বজনকে ফোনে ধরিয়ে দেন। অনেকে আবদার করেন, কোয়ারেন্টাইনে যদি থাকতেই হয়, তাহলে স্বামী বা স্ত্রী’র সঙ্গে থাকবেন।’ সাধারণ যাত্রীদের কথা না হয় ছেড়েই দিন। বিদেশ ফেরত চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বললেই জোর তর্ক জুড়ে দেন। তাঁদের সামলানোই তখন কঠিন হয়ে পড়ে। বলছিলেন নিগমের এক কর্মী। যাত্রীদের আব্দার নিয়েও মজার অভিজ্ঞতা হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের। কথায় কথায় নিগমের চেয়ারম্যান বিপ্লব রায়চৌধুরী বলছিলেন, ‘প্লেন থেকে নেমেই কেউ খাবার চান। কেউ জল এনে দিতে বলেন। আমাদের কর্মীরা এনেও দেন। একবার এক যাত্রী মাঝরাতে ধমকের সুরে নির্দেশ দিলেন, এয়ারপোর্টের মধ্যে খাবারের দোকান থেকে গরম দুধ এনে দিন! বুঝুন কাণ্ড! একদিন রাতে কর্তব্যরতকর্মী ক্ষুধার্ত যাত্রীকে নিজের বিস্কুট খাইয়ে কি বিপাকেই না পড়তে হয়েছিল! বিস্কুট খেয়ে তুমুল হইচই বাঁধিয়ে দিলেন তিনি। যাত্রীরা অনেকে ধরেই নেন, বিস্কুট পাওয়া তাঁদের হক অধিকার। তা নিয়ে ‘বিস্কুট-কেলেঙ্কারি’র অভিযোগ তুলে তুলকালাম বাঁধিয়ে দেন যাত্রীরা।’
সবমিলিয়ে রাতভর বিদেশ ফেরত ‘আমি’দের সামলাতে হিমশিম অবস্থা হচ্ছে নিগমকর্তাদের। স্মৃতির ভাঁড়ারে জমা হচ্ছে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার।