বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক তখন সাড়ে ৭টা। শহিদ শ্যামল দে-র মরদেহ পৌঁছল সিংপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। এই স্কুলেই তাঁর সহজপাঠ শেখা, এই মাঠেই খেলাধুলা করেই তাঁর বেড়ে ওঠা। সেই মাঠেই তৈরি ছিল শেষবিদায়ের মঞ্চ। ধবধরে সাদা কাপড়ে মোড়া মঞ্চে শায়িত হলেন কফিনবন্দি বীর জওয়ান। শুক্রবার দুপুরে শ্রীনগরের বিজবেহারায় জঙ্গিদের গুলিতে নিথর হয়ে গিয়েছে তাঁর দেহ।
মাঠে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। ভিড়ের চাপে যাদের জায়গা হয়নি মাঠে, তাঁরা উঠে গিয়েছে গাছের ডালে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, শিক্ষক থেকে শুরু করে সিআরপিএফ অফিসার, এসপি, জনপ্রতিনিধি, সকলেই হাজির। ভারত মায়ের বীর সন্তানকে শেষশ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি কেউই। মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, সকলেই পাঠিয়েছেন তাঁদের শেষ শ্রদ্ধার অর্ঘ্য। কান্না আর বুক চাপড়ানোর হা-হুতাশের মধ্যে দিয়ে কেটে গেল দু’টো ঘণ্টা। তাতেও যেন শেষদেখার শেষ হয় না। শ্রদ্ধা জানানোর লাইনে তখনও ভিড়।
সাড়ে ৯টায় রাজ্যপুলিসের গান স্যালুটের পর মঞ্চ থেকে ওঠানো হল দেহ। এবার বাড়ির পথে। যে বাড়ি ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন শ্যামল। তৈরি হচ্ছিল পাকা ঘর। নতুন সংসার পাতার আশায়। জেলার এসপি, সিআরপিএফের অফিসার আর জওয়ানদের কাঁধে চেপে শ্যামল এগিয়ে চললেন তাঁর স্বপ্নের ঘরের দিকে। প্রায় ৮০ ভাগ সম্পূর্ণ সে ঘর। কিন্তু, শেষটা আর দেখা হল না। মা শিবানীদেবীকে ধরে ধরে নিয়ে আসা হল একমাত্র সন্তানের মরদেহের সামনে। কফিনের সামনে এসে জ্ঞান হারালেন তিনি। দেখতে পারলেন না সন্তানকে। দেখতে না পারারই কথা। কফিনের সামনে থেকে কোনও রকমে নিয়ে যাওয়া হল বাড়িতে।
বাড়ি লাগোয়া জমিতেই সাজানো হয়েছিল চিতা। বাবা বাদলবাবু বললেন, একবার দেখব প্রিয় সন্তানের মুখটা। কফিনের সামনে নিয়ে যাওয়া হল তাঁকে। দেখলেন সন্তানের মুখ। শেষবারের মতো। তারপর সিআরপিএফের গান স্যালুটে জানানো হল শ্রদ্ধা। উঠল স্লোগান, ভারত মায়ের বীর সন্তান শ্যামল দে অমর রহে। বাতাসে বিলীন হয়ে গেল নশ্বর দেহ। জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে শহিদ জওয়ান শ্যামল দে’কে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। ছবি: দেবব্রত সরকার