বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বুধবার নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাকে ‘পলিটিক্যালি ডিস্টার্ব’ করতে গিয়ে বাংলার সর্বনাশ করতে চাইছেন কেউ কেউ। দেশের মধ্যে করোনা আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্র থেকে তড়িঘড়ি ট্রেনে চাপিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের এ রাজ্যে ফেরানো নিয়েই যে তাঁর এই অভিযোগ, সে ব্যাখ্যাও দেন মমতা। বলেন, রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলেই, করোনায় জর্জরিত মহারাষ্ট্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়া হল। আজ রাতের মধ্যে আসছে ১১টা ট্রেন, কাল আসবে আরও ১৭টা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা আমাদের ঘরের লোক। কিন্তু সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, তাই পরিকল্পনা করে মোট ২৩৫টি ট্রেনের তালিকা রেলমন্ত্রকে দেওয়া হয়েছিল। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের তৈরি করা ওই তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ট্রেনে চাপিয়ে ঘরে ফেরানোর কথা ছিল। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া চলার কথা। মমতার আক্ষেপ, সেই তালিকা মানা হল না। এ কী কথা! রেল মন্ত্রককের কোনও দায়িত্ব থাকবে না! গায়ের জোরে চালিয়ে দেওয়া হবে।
ক্ষুব্ধ মমতার অভিযোগ, ওরা (রেল) বলছে, মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে কথা বলেই ট্রেন চালানো হয়েছে। আমি নিজে মহারাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা জানিয়েছে, ওদের রাত দু’টোর সময় বলা হয়েছে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ৩৬টা ট্রেন মুম্বই থেকে ছেড়ে দিল। মহারাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বাংলায় ছড়িয়ে দাও। কেউ কেউ তা চাইছেন, রাজনীতি করছেন। করোনা সামলাবো, নাকি উম-পুন সামলাবো, নাকি পরিযায়ী দের সামলাবো। দুর্যোগ - দুর্ভোগ, নাকি চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি! কোনটা সামলাবো! স্পষ্ট বিরক্তির সুর রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের গলায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একসঙ্গে কয়েক লাখ শ্রমিক ফিরলে সামলাবো কী করে! আমার কথা না হয় ছেড়েই দিন, কেন্দ্র নিজে পারবে এত লোককে কোয়ারেন্টাইন করতে! প্রথমে করোনা, এরপর পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো এবং এখন উম-পুন পর্বে মমতা সহ গোটা রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপির বঙ্গ ব্রিগেড। কার্যত সেই প্রসঙ্গেই সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা পাল্টা বলেন, আগে বলিনি, আজ বলছি! বাধ্য হয়েই বলছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেদিন ফোন করেছিলেন, সাফ বলেছিলাম, ঘন ঘন টিম পাঠাচ্ছেন। আমরা যখন করোনা প্রতিরোধ করতে পারছি না, আপনারাই দায়িত্ব নিন না। উনি বলেছিলেন, নেহি, চুনে হুয়ে সরকার কো ক্যায়সে তোড়ে! এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব, বিষয়টা দেখুন। করোনা যাতে না বাড়ে। কেউ কেউ রাজনীতির জন্য বাড়াতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইছি, প্লিজ, হেল্প আস।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে রেল মন্ত্রকের একপেশে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করার পাশাপাশি তাঁরা ফিরলে কী কী করতে হবে, জেলা প্রশাসনকে সেই নিদানও দিয়েছেন মমতা। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি এবং তামিলনাডুর চেন্নাই থেকে যাঁরা ফিরছেন, স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর তাঁদের রাখতে হবে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। স্থানীয় স্কুল বাড়ি ব্যবহার করতে হবে। সেখানে ১৪ দিন থাকার পর লালারস পরীক্ষা হবে। যাঁরা নেগেটিভ হবেন, বাড়ি ফিরে যাবেন। পজিটিভ হলে চিকিৎসা হবে। মমতা জানিয়ে দেন, ওই সমস্ত সেন্টারে কেউ যদি বাড়ির খাবার নিতে চান, সেটার অনুমতিও দেওয়া যাবে। আর যাঁরা সেন্টারের খাবার খেতে চাইবেন, তাঁদের ব্যবস্থা আমরা করব। পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়টি তদারকির জন্য ব্লকস্তর পর্যন্ত টাস্ক ফোর্স এদিন রাতের মধ্যেই গঠন করতে জেলাশাসক ও পুলিস সুপারদের নির্দেশ দেন মমতা।