সোহম কর, কলকাতা: প্রবল সঙ্কটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন টলিপাড়ার সাপ্লায়াররা। ধারাবাহিক এবং ফিল্মের শ্যুটিংয়ের জন্য লাইট, ক্যামেরা, কস্টিউম, গাড়ি প্রভৃতি সরবরাহ করে থাকেন তাঁরা। প্রায় দু’মাস হতে চলল শ্যুটিং বন্ধ। ক্রমেই অর্থাভাব গ্রাস করেছে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অগণিত মানুষকে। অনেকেই বিকল্প পেশার কথা চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু এতদিন একটি পেশায় জড়িত থাকার পর হঠাৎ করে নতুন পেশা খুঁজে নেওয়াটাও বেশ কঠিন। এই মুহূর্তে ৬টি ধারাবাহিকে লাইট সরবরাহ করছিলেন মানিক দাস। তিনি বলছিলেন, ‘আমার কাছে ৫২ জন ছেলে কাজ করে। সবাই খুব খারাপ অবস্থায় আছি। করুণাময়ী রানি রাসমণি ধারাবাহিকে লাইট সাপ্লাই করতাম। সেখানেও টাকা বকেয়া। তারপর লকডাউনের জন্য সব বন্ধ। এই মুহূর্তে দেশের বাড়ি মেদিনীপুরে চলে এসেছি।’ বাড়ি ফিরে গিয়ে পারিবারিক সামান্য জায়গা-জমিতে সব্জি চাষ করেছেন মানিকবাবু। সেখান থেকেই নিজেদের কিছুটা খাবারের সংস্থান করছেন তিনি। ‘চাইলেই তো পেশা বদলাতে পারব না। তার জন্যও অনেক সময় লাগবে। আমার সঙ্গে যারা কাজ করে তাদের অবস্থা খুব খারাপ। সারাদিন ফোন আসছে, জবাব দিতে পারছি না। এখন তো অপেক্ষা করা আর ভগবানের উপর আস্থা রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই’, যোগ করলেন মানিক দাস। অন্যদিকে ১২টি ধারাবাহিকে পোশাক সরবরাহ করছিলেন শঙ্কর জানা। তিনিও একই সুরে বললেন, ‘আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। যদি পরিস্থিতি একই থাকে, তাহলে তো পেশা বদলাতেই হবে। আমাদের পরিবারগুলোর কী হবে! আমি ভেবেছি, বিড়ির ব্যবসা বা মুদিখানার ব্যবসার দিকে এগব। আমার সঙ্গে ৫০টি ছেলে কাজ করে।’ তিনতলা সমান জামাকাপড় রয়েছে তাঁর কাছে। যদি মুদিখানার দোকানও শুরু করেন, সেক্ষেত্রে সেই জামাকাপড়ের কী হবে! এইরকম নানা চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শঙ্করবাবু। ‘কিছু লোককে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা ফোন করে বলছে, ওদের ওখানে খরা প্রবণ এলাকা। বছরে একবার চাষ হয়। তাহলে কী করব! তার মধ্যে যে চারটে ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে গেল, তার মধ্যে দুটো ধারাবাহিকে আমি কাজ করতাম। আবার অনেক ধারাবাহিকের পাওনাও বকেয়া রয়েছে। তবে, কিছু কিছু টাকা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে পাঠাচ্ছে’, বলছিলেন শঙ্করবাবু।
সাপ্লায়ার্স অ্যাসোশিয়াসনের সভাপতি নীত পাল বলছিলেন, ‘একটা শ্যুটিং স্পটে আমাদের তরফে প্রচুর কেয়ারটেকার থাকে। ক্যামেরার সঙ্গে ২-৩ জন, লাইটের সঙ্গে ১০-১২ জন। এই সংখ্যাটা কিন্তু টেকনিশিয়ানদের থেকে অনেক বেশি। আর্টিস্ট ফোরাম, বড় প্রযোজক, অভিনেতাদের তো আমাদের পাশে এসে দাঁড়ানো উচিত। আমি তাঁদের এইটুকু অনুরোধই করব যে, এদের পাশে দাঁড়ান।’ এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ২০ মে সাপ্লায়ার্সরা নিজেদের মধ্যে মিটিংও করবেন বলে জানা গিয়েছে। নীত পালের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি কয়েকদিন আগে ফেডারেশনের সম্পাদক অপর্ণা ঘটকের সঙ্গে শ্যুটিং শুরু করার বিষয়ে কিছু প্রস্তাব দিয়ে আলোচনা করেছিলেন। অবশ্য, অপর্ণা ঘটক বিষয়টি স্বীকার করেননি। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘উনি সংবাদমাধ্যমের কাছে এসব বলেছেন। আমাদের কাছে ওঁরা কিছু বলতে আসেননি। ওঁরা কথা বলতে এলে তো কথা বলব।’