নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাড়ির চেম্বারে এক্স-রে রিপোর্ট নিয়ে এসেছিলেন রোগী। স্বাভাবিকভাবে সেই রোগীর এক্স-রে রিপোর্ট দেখেছিলেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ডাঃ তপন মুখোপাধ্যায়। এরপর সেই রোগী অ্যাপোলো হাসপাতালে বুকে সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। সেখানে দেখা যায়, ওই রোগীর করোনার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ। যে কারণে ডাঃ তপন মুখোপাধ্যায়কে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তপনবাবু বলেন, গত ৪ এপ্রিল বউবাজারে আমার বাড়িতে ওই ব্যক্তি সস্ত্রীক এসেছিলেন। যদিও তিনি আমার রোগী নন। আমার এক জুনিয়রকেই দেখান তিনি। সেদিন আমি প্রশ্ন করেছিলাম, কেন তিনি এসেছেন। তখন তাঁর এক্স-রে রিপোর্ট নিয়ে দেখেছিলাম, তাঁর বুকে সমস্যা রয়েছে। এরপরই ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন। সোমবার আমাকে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে ফোন করে বলা হয়, ওই রোগীর করোনা পরীক্ষা পজিটিভ এসেছে। তাই আমাকে আপাতত ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পুরভবনে পৌঁছনোর ১০ মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ফোন করা হয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে।
তপনবাবু বলেন, ফোন আসার পরই আমি ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষকে জানিয়ে বেরিয়ে আসি। তবে সেদিন যখন ওই ব্যক্তি এসেছিলেন, তখন প্রায় এক-দেড় মিটার দূরত্বেই তিনি বসেছিলেন। মাস্কও ছিল মুখে। সরাসরি আমার সংস্পর্শে আসেননি। তবে নিয়মানুযায়ী, গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকা প্রয়োজন। তবে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, ওই রোগীর স্ত্রী-সন্তান এবং যে চিকিৎসকের কাছে তিনি যেতেন, তাঁদের রাজারহাটের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, তপনবাবু পুরভবনে সোমবার এসে ওই ১০-১৫ মিনিট কার কার সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা দেখা হচ্ছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, আমরা তপন মুখোপাধ্যায়ের ঘরটি রাসায়নিক স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করে দিয়েছি। তবে আপাতত ওই ঘর বন্ধ থাকবে। অবশ্য এও ঠিক, তপনবাবু ওই রোগীর সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসেননি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির বউবাজারে একটি মুদিখানার দোকান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন।
এদিকে, গত শুক্রবার ৪০ বছর বয়সি এক ভবঘুরেকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে বউবাজার থানার পুলিস। এলাকায় টহল দিতে গিয়ে পুলিস কবিরাজ রো’তে ওই ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। ওই ব্যক্তির জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ ছিল বলে এনআরএস সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসায় ওই ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সোমবার তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। সোমবার রাতেই সেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে। মঙ্গলবার তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। একইভাবে নারকেলডাঙা মেন রোড থেকেও এক ভবঘুরেকে উদ্ধার করে এনআরএসে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁরও রিপোর্ট পজিটিভ মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁকেও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সুপার ডাঃ আশিস মান্না বলেন, এনআরএস হাসপাতাল থেকে দু’জনকে আইডি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দু’জনেরই রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এদিকে, এনআরএস হাসপাতালে করোনা সংক্রমণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মোট ৮৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এনআরএস হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে ৩০ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। যার ফলে স্বস্তি ফিরেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। একইসঙ্গে, আরও দু’ফায় বাকি ৪৯ জনের মধ্যে ১৪ জন এবং ২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।