পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এই নিদারুণ অমানবিক অথচ বাস্তব পরিস্থিতির ছবি এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে রাজধানী দিল্লির লাগোয়া দুই বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায়। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরগাঁও-এর মতো তল্লাটে। এই সব বর্ধিষ্ণু শিল্পাঞ্চল এলাকায় বাংলার কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, নদিয়া প্রভৃতি জেলার বাসিন্দা কয়েক হাজার দিনমজুর মানুষের অনেকের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা জুটেছে গত তিন-চার দিন ধরে। সংখ্যালঘুদের জন্য করোনা সর্বত্র ছড়িয়েছে— এই প্রচার চাউর করেই এলাকার সংখ্যাগুরু এবং বিত্তবান মানুষ এদের কার্যত এখন একঘরে করে দিয়েছে। পুলিসও মাঝে-মধ্যে এসে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, যাতে তাঁরা এক মুহূর্তের জন্যও তাঁদের এক চিলতে ঘরের চৌকাঠ না পেরন। ন্যূনতম রসদ ফুরানোর জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনতে গিয়ে দোকানের সামনে তাদের আলাদা লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে কোথাও কোথাও। দোকানদার সবাইকে আগে মাল সরবরাহের পর তবে দৃষ্টি দিচ্ছে তাদের দিকে। মুখে মাস্ক পরা থাকলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিসের লাঠির ঘা’ও খেতে হয়েছে কাউকে কাউকে রাস্তায় বেরনোর অপরাধে।
নিজেদের এই করুণ অবস্থার কথা জানাচ্ছিলেন গুরগাঁও-এর ৪৬ নম্বর সেক্টরের ঝুপড়িবাসী নূর ইসলাম ব্যাপারী, নয়ডার ৪৯ নম্বর সেক্টরের অস্থায়ী বাসিন্দা আয়ুব আলি, গাজিয়াবাদে ডেরা বাঁধা সোনু এবং রুবেল হকরা। এঁদের সকলেরই মূল ভিটে কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার নানা গ্রামে। একইভাবে টেলিফোনে অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন মালদহের আদি বাসিন্দা জহিরুল মোল্লা, নদিয়ার ইয়াসিনের মতো পরিযায়ী শ্রমিকরা। এঁরা সকলেই কেউ কোনও স্থানীয় কারখানায় কাজ করেন, কেউ বা রাজমিস্ত্রি এবং জোগাড়ে। পরিবারে বেশি রোজগারের লক্ষ্যে এঁদের অনেকের সঙ্গে যাওয়া স্ত্রী’রা এই সব কাজে সাহায্যের পাশাপাশি কেউ কেউ বিত্তবানদের গৃহ পরিচারিকার দায়িত্বও সামলান। নূর, সোনু, আয়ুবরা মঙ্গলবার বললেন, লকডাউনের জন্য কাজ হারিয়ে কোনওক্রমে এতদিন কাটিয়েছি। নানা জায়গায় খবর দেওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে ত্রাণ বলতে কিছু পাইনি। থানা কেবল নাম লিখেই দায়িত্ব সেরেছে। মজুত রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় দারুণ সমস্যায় পড়েছি আমরা। সবচেয়ে বড় কথা, কাছে থাকা হাতে গোনা টাকা দিয়ে কিছু কিনতে যাওয়ারও উপায় নেই এখন। বাইরে বেরলেই কখনও পুলিস, কখনও বা স্থানীয় মাতব্বররা লাঠি নিয়ে রে রে করে আসছে। বলছে, নিজামুদ্দিনের ঘটনা প্রমাণ করেছে যে দেশে সংখ্যালঘুদের জন্যই করোনা বেশি ছড়িয়েছে। তাই আমরা খেতে পাই বা না পাই, ঘরের বাইরে এক কদমও রাখা চলবে না। গুরগাঁও-তে স্থানীয় চৌকির পুলিস আমাদের বলে দিল, কয়েকদিন না খেলে কিছু হবে না। দিন কয়েক এই অবস্থায় থাকার পর ফের খোঁজ নিও ত্রাণের ব্যাপারে। আবার আমাদের বউরা কাজের বাড়িতে গেলেও একই ব্যবহার পেয়েছে। গৃহকর্তারা মাস মাইনে ধরিয়ে আর তাদের বাড়িমুখো না হওয়ার ফতোয়া দিয়েছে। একই দেশের নাগরিক আমরা। কী অমানবিক ভাবুন এখানকার স্থানীয় মানুষ থেকে প্রশাসন। মোবাইলের কথাবার্তা শেষে ওঁদের সকলেরই আর্জি একটাই— প্লিজ দিদিকে বলুন আমাদের এই অবস্থার কথা।