নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ করোনা ত্রাণ তহবিলে বিধায়করা তাদের এক মাসের বৈঠক-ভাতা বাবদ ৬০ হাজার টাকা করে জমা দিতে শুরু করলেন। লকডাউনের কারণে বিধানসভায় আসতে না পারায় অবশ্য অধিকাংশ বিধায়ক এখনও এই টাকা জমা দেওয়ার কাজে এগননি। তবে সরাসরি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার তথা আরটিজিএস পদ্ধতির সঙ্গে সড়গড়, এমন কয়েকজন তৃণমূল বিধায়ক অধ্যক্ষকে এই টাকা জমা পড়ার কথা জানিয়েছেন ফোনে। সোমবার স্বয়ং বিমানবাবু আরটিজিএস করে ত্রাণ তহবিলে ব্যক্তিগতভাবে এক লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। এদিন তিনি নিজেই নিজের ও বিধায়কদের এই টাকা জমা দেওয়ার কথা জানান। লকডাউনের ফলে বিধানসভা বন্ধ থাকায় গত এক পক্ষ কাল ধরে বিধানসভার কোনও কমিটি বৈঠক হচ্ছে না। যদিও অধ্যক্ষ গত অধিবেশনের শেষ দিনে ঘোষণা করেছিলেন, বৈঠক না হলেও বিধায়করা তাঁদের ভাতার টাকা পেয়ে যাবেন। বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে প্রত্যেক বিধায়ককে মাসে চারটি বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। এই টাকা তাঁর মাসিক ২১ হাজার ৮৭০ টাকা নির্দিষ্ট বেতনের বাইরে। মুখ্যমন্ত্রী করোনা তহবিল গঠনের পর অধ্যক্ষ ঠিক করেন, যেহেতু বিধায়কদের এখন কমিটি বৈঠকে যোগ দিতে হচ্ছে না, তাই দলমত নির্বিশেষে এক মাসের ভাতা তাঁদের এই তহবিলে দান করতে তিনি অনুরোধ জানাবেন। একটি ভিডিও বার্তায় অধ্যক্ষ তাঁর সেই আবেদন জানিয়ে দেন মিডিয়ার কাছে। সেই আবেদনে শাসক ও বিরোধী, সব পক্ষের বিধায়করাই মোটামুটি সাড়া দিয়ে তাঁকে ফোন করেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে বিধায়করা নিজ নিজ কেন্দ্রে আটকে পড়ায় এই অঙ্কের চেক ত্রাণ তহবিলে জমা করতে অসুবিধায় পড়েন। তার মধ্যে পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার দলীয় বিধায়কদের এক মাসের বেতনের অংশ এবং ১০ হাজার টাকা— আলাদা করে এই দুটি পৃথক চেক কেটে যথাক্রমে তৃণমূল পরিষদীয় এবং সরাসরি দলের নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দেন এসএমএস বার্তা পাঠিয়ে। অধ্যক্ষের আবেদনের পর পার্থবাবুর এহেন নিদান ঘিরে দলের এমএলএ’দের একাংশের মধ্যে এক দফা বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যদিও তাঁরা পরে বুঝে যান, দু’জনের আবেদনে সাড়া দিয়ে সব দিক রক্ষা করে চললে বিতর্ক বেশি দানা বাঁধবে না।
যদিও অধ্যক্ষ এদিন বলেন, এক মাসের বৈঠক-ভাতা জমা দেওয়ার জন্য আমি সব বিধায়কের কাছেই আবেদন জানিয়েছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে আরটিজিএস করে তা জমা করেছেন বলে আমায় ফোনে জানিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এবং বিজেপি’র বিধায়ক-নেতা মনোজ টিগ্গাও এই উদ্যোগে শামিল হবেন বলে জানিয়েছেন। তবে বৈঠক-ভাতার বাইরে এক মাসের বেতন বা আরও ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত, সেটা সম্পূর্ণভাবে তৃণমূলের দলীয় নির্দেশ। এর সঙ্গে আমার আবেদনের কোনও সম্পর্ক নেই। দলের বিধায়ক হিসেবে ওই নির্দেশ আমি সহ সকলেই মানবেন।