অয়নকুমার দত্ত, কলকাতা: তোতলা গণশাকে মনে আছে? বা ধরুন ঘোৎনা, রাজেন, ত্রিলোচনা কিংবা গোরাকে? জেন ওয়াইয়ের সঙ্গে এদের পরিচয় না থাকলেও ন’দশকের গোড়ার দিকে বিনোদনের সবেধন নীলমণি মাধ্যম দূরদর্শনের সঙ্গে যাঁদের বেড়ে ওঠা, তাঁরা ঠিক ধরে ফেলেছেন এরা সকলে ‘বিবাহ অভিযান’ টেলি সিরিজের চরিত্র। প্রায় তিন দশক পর আবার ‘বিবাহ অভিযান’ নস্ট্যালজিয়া কেন? আসলে এই লকডাউনের বাজারে অনেক চ্যানেলই তাদের অতীতের সেরা সম্ভারগুলো দর্শকের সামনে ফের একবার তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। যেমন দূরদর্শনের জাতীয় চ্যানেলে সম্প্রচার শুরু হয়েছে ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’, ‘সার্কাস’-এর মতো ধারাবাহিকগুলির। তেমনই দূরদর্শন বাংলা তাদের দর্শকদের জন্য ন’য়ের নস্ট্যালজিয়া হিসাবে শঙ্কর চক্রবর্তী, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় অভিনীত ১০ পর্বের ‘বিবাহ অভিযান’ টেলি সিরিজটি হাজির করার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে।
‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘বিবাহ অভিযান’, ‘এক সমুদ্র অনেক টেউ’, ‘নৃসিংহ রহস্য’-এর মতো বাংলা দূরদর্শনের সোপ অপেরাগুলি আজও দর্শক মনে রেখেছেন। আবার এই চ্যানেলে একসময় ‘জননী’, ‘জন্মভূমি’র মতো মেগা ধারাবাহিকও সম্প্রচার হয়েছে। অনেকে লকডাউনে বাড়িতে বসে সেই স্মৃতির স্পর্শ পেতে চাইছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেগুলি সম্প্রচারের বেশ কিছু বাধা রয়েছে। যেমন— ‘জননী’ বা ‘জন্মভূমি’ দূরদর্শনের ইনহাউস প্রোগ্রাম ছিল না। এই ধারাবাহিকগুলি ছিল স্পনসর্ড প্রোগ্রাম। অর্থাৎ এগুলির স্বত্ব রয়েছে অন্য কোনও ব্যক্তির হাতে। আবার রয়েছে যান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতাও। সেই সময় ছিল অ্যানালগ সিস্টেম। আর এখন অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয় ডিজিটাল মাধ্যমে। অর্থাৎ সেই সময় ডেটা ক্যাম্প বা টিভি প্রো মেশিনের সাহায্যে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলিকে আজকের দিনে আবার দেখাতে গেলে ব্লু রে ডিস্কের উপযোগী করে তুলতে হবে। সূত্রের খবর, দেবকুমার বসু পরিচালিত ‘বিবাহ অভিযান’ সিরিজটিকে আপাতত ডিজিটালে পরিবর্তিত করে ফের দেখানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে গল্ফগ্রিনে। এ প্রসঙ্গে পর্দার গণেশ অর্থাৎ অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘তিরিশ বছর পর যদি সত্যিই বিবাহ অভিযান দেখানো হয়, তাহলে সেটা হবে আমার কাছে সেরা উপহার। ’৯০-এ শ্যুটিং করেছিলাম। প্রথম দেখানো হয় ’৯১-এ। মাত্র ১০ পর্বের এই শো যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না। আজও অনেক অনুষ্ঠানে গেলে আমাকে অনুরোধ করা হয় গণশার সংলাপ বলার জন্য। এই লকডাউনে আমি নিজেও বাড়িতে বসে বিবাহ অভিযান দেখব।’
দূরদর্শনের প্রথম মেগা সুপ্রিয়া দেবী অভিনীত ‘জননী’র প্রযোজক ছিলেন অশোক সুরানা। প্রয়াত এই প্রযোজকের মেয়ে ঈশিতা সুরানা আকাশ আট চ্যানেলের কর্ণধার। ‘জননী’ প্রসঙ্গে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের চ্যানেলে অনুরাধা রায় অভিনীত জননী ধারাবাহিকটি ইতিমধ্যে দেখা হচ্ছে। কিন্তু যেহেতু যান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাই সুপ্রিয়া দেবী অভিনীত জননী দেখানো সম্ভব নয়।’
পুরনোর ডালি নিয়ে হাজির অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলগুলিও। নতুন ধারাবাহিক বা শো-এ যেমন একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলে, তেমনই নিজেদের ‘সর্বকালের সেরা শো’ নিয়েও বোকাবাক্সে চলছে জোর টক্কর। জি বাংলা ইতিমধ্যে একসময়ের জনপ্রিয় ফিকশন শো ‘এক আকাশের নীচে’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘আমার দুর্গা’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘ভুতু’ বা ‘গোয়েন্দা গিন্নি’র সঙ্গে ‘সা রে গা মা পা’ ও ‘মীরাক্কেল’-এর মতো রিয়েলিটি শো-কে হাজির করেছে। ছোট্ট আর্শিয়া ওরফে ভুতুর কারসাজি কিংবা ধূর্ত রাজনীতিক অভিরূপ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্গার লড়াই কিংবা দিয়া-আর্যর ভালোবাসা বা পরমা মিত্রর গোয়েন্দাগিরি এই চ্যানেলকে অতীতে টিআরপি-র নির্ভরতা দিয়েছে। ময়দানে রয়েছে স্টার জলসাও। তাদের পুরনো ধারাবাহিকের মধ্যে থাকছে ‘কিরণমালা’, ‘ভজ গোবিন্দ’, ‘পটলকুমার গানওয়ালা’, ‘গানের ওপারে’, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। এই চ্যানেলের পটলের গানে যেমন একসময় দর্শক মজেছিলেন, তেমনই মিমি চক্রবর্তী, অর্জুন চক্রবর্তী, অলকানন্দা রায় অভিনীত ‘গানের ওপারে’ আজও সকলে মনে রেখেছেন। তাছাড়া এই ধারাবাহিকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের নামও।
করোনার বিষ কেটে লকডাউন শেষ হোক সকলেরই প্রার্থনা। তবে, যতদিন না বাড়ির বাইরে মানুষ পা দিতে পারছেন, ততদিন বাঙালির ড্রয়িংরুম ঘিরে থাকবে ছোটপর্দার স্মৃতি মেদুরতায়।