নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আগামীকাল, সোমবার থেকে রেশনের ফুড কুপন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শনিবার জানিয়েছেন, খাদ্য দপ্তরের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন এবং কলকাতায় পুরসভার উদ্যোগে কুপন তৈরির কাজ চলছে। ভোট সংক্রান্ত কাজে যুক্ত বুথভিত্তিক কর্মীদের দিয়ে এই কুপন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল থেকে এই কুপন দেখিয়ে রেশন দোকান থেকে চাল ও গম বা আটা মিলবে। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৬০ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ কুপন দেখিয়ে বিনা পয়সায় পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য পাবেন। যাঁরা এক নম্বর রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রেশন কার্ড পাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েও এখনও কার্ড হাতে পাননি তাঁরা এটা পাবেন। কিন্তু রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করা প্রায় ৬ লক্ষ ১১ হাজার মানুষ দুই নম্বর রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের কার্ড পাওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এঁরা যে কুপন পাবেন তাতে এক কেজি করে চাল ও গম বরাদ্দ আছে। এই কুপন প্রাপকদের দুই নম্বর প্রকল্পের রেশন কার্ডধারীদের মতো ১৩ টাকা কেজি দরে চাল ও ৯ টাকা কেজি দরে গম কিনতে হবে। কুপন ও বিভিন্ন শ্রেণীর রেশন কার্ড মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষের জন্য নিখরচায় খাদ্য সরবরাহ করবে সরকার। আর স্বল্প মূল্যে কিনতে হবে প্রায় দেড় কোটি মানুষকে। শুধু কুপনধারীদের এপ্রিল মাসের জন্য খাদ্য দপ্তর ১১ হাজার ৭১ টন চাল ও ১৬ হাজার ৩৫৯ টন গম বরাদ্দ করেছে। অল ইন্ডিয়া ফেয়ারপ্রাইস শপ ডিলার ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, কুপনের জন্য বরাদ্দ খাদ্য রেশন দোকানে দ্রুত সরবরাহ করতে তাঁরা খাদ্যদপ্তরকে অনুরোধ করেছেন। রেশন কার্ড ও কুপনধারীদের প্রতি দফায় ১৫ দিনের খাদ্য একসঙ্গে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। বিশ্বম্ভরবাবুও জানিয়েছেন, একসঙ্গে এক মাসের খাদ্য দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মজুত করার ব্যবস্থা রেশন দোকানগুলোতে নেই। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল ও গম সরকারের কাছে আছে, সবাই বরাদ্দ মতো খাদ্য পাবেন। গ্রাহকদের মাথাপিছু পাঁচ কেজি খাদ্যর মধ্যে ২ কেজি চাল ও ৩ কেজি গম বা আটা দেওয়া হয়। জেলায় সংশোধিত রেশন এলাকায় মূলত আটা দেওয়ার কথা। কলকাতা সহ বিধিবদ্ধ রেশন এলাকায় গম দেওয়া হয়। শহর এলাকাতেও গম ভাঙানোর অনেক কল বন্ধ থাকায় মানুষের সমস্যা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও গ্রাহক চাইলে গমের বদলে পুরোটাই চাল দেওয়া যায় কি না সেটাও দপ্তর খতিয়ে দেখছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে শনিবার সাপ্তাহিক টক টু মেয়র অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছেও রেশন কার্ড সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ আসে। বেশ কয়েকজন মেয়রকে বলেন, তাঁদের কাছে আরকেএসওয়াই ১ কার্ড রয়েছে। কিন্তু রেশন দোকানে গিয়ে তাঁরা খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছেন না। আবার অনেকেই বলেন, তাঁরা এখনও রেশন কার্ডই পাননি। কিন্তু তাঁরা আরকেএসওয়াই১ কার্ড পাওয়ার জন্য ফর্ম পূরণ করেছেন। কিন্তু হাতে কার্ড পাননি। মেয়র তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, তাঁরা প্রত্যেকে সঠিক পরিমাণ রেশন সামগ্রী পাবেন। তিনি খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবারও এবিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। যাঁরা আরকেএসওয়াই ১-এর নথিভুক্ত এবং কার্ড পাননি, তাঁদেরকে একটি অস্থায়ী কুপন দেওয়া হবে। যা নিয়ে তাঁরা রেশন তুলতে পারবেন। এদিন মেয়রকে বেলেঘাটার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুরেন সরকার রোডের এক বাসিন্দা ফোন করে বলেন, তাঁর কাছে আরকেএসওয়াই ১ কার্ড রয়েছে। কিন্তু রেশন দোকান থেকে তাঁকে সামগ্রী দিচ্ছে না। যা শুনে মেয়র বলেন, আপনিই রেশন অবশ্যই পাবেন। কেউ রেশন না দিলে সেই রেশন দোকানের মালিক অপরাধ করছেন। মেয়র ওই বাসিন্দাকে কলকাতা উত্তরে রেশন বণ্টনের দায়িত্বে থাকা কর্তার নম্বর দিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। একইসঙ্গে মেয়রের কাছে এদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রেশন কার্ড না পাওয়া নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে ফোন এসেছে।