নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গত সোমবার থেকে পোস্তায় কলকাতার সবথেকে বড় পাইকারি বাজার বন্ধ। শুধু কলকাতা বা এরাজ্য নয়, ভিনরাজ্যেও এখান থেকে পণ্য সরবরাহ হয়। ডাল, তেল, নুন, চিনি, আটা-ময়দা, রান্নার বিভিন্ন মশলা, চাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিস বিভিন্ন বাজারে যায় এই পোস্তা থেকে। বাজার পুরোপুরি বন্ধ থাকায় উদ্বিগ্ন এখানকার ব্যবসায়ীদের সংগঠন। পোস্তা বাজার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সীতানাথ ঘোষ বুধবার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বাজার খোলার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে সরকারের কোনও আলোচনা হয়নি। তবে তাঁরা আলোচনায় বসতে আগ্রহী। সেই উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে। কারণ, পোস্তা বন্ধ থাকলে খুচরো দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর সমস্যা দেখা দেবে, সেকথা তাঁরাও জানেন। তবে বাজার খোলার ব্যাপারে কিছু খুঁটিনাটি সমস্যা রয়েছে। সরকারি নির্দেশিকায় লকডাউন চলাকালীন মুদির দোকানকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পোস্তার ব্যবসায়ীরা এর আওতায় পড়েন না। ফলে বাজার খোলা নিয়ে আইনি সংক্রান্ত দেখা দিয়েছে। তাছাড়া লকডাউন চলায় ব্যবসায়ী ও তাঁদের কর্মীরা আসতে পারছেন না। পোস্তা বাজারে পণ্য নামানো-ওঠানোয় শ্রমিকদের বড় ভূমিকা থাকে। বহু শ্রমিক এই ডামাডোলের কারণে বাড়ি চলে গিয়েছেন। বাইরে থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর লরি এলেও তার সংখ্যা খুব কম। যদিও সেইসব সামগ্রীর ঘাটতি এখানে তেমন নেই। প্রচুর পরিমাণে মজুত আছে গুদামে। তবে রাজ্যের সীমান্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সহ বেশ কিছু লরি আটকে রয়েছে। সেগুলিকে নিয়ে আসার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চান সীতানাথবাবুরা। তিনি জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদের সঙ্গে তাঁদের এনিয়ে আলোচনা করার কথা। তাঁরা পুর কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।
এদিকে, শহরের পাইকারি বাজারগুলিতে গ্ৰামের বিভিন্ন হাট থেকে প্রচুর সব্জি আসছে। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেই সব্জি খুচরো বাজারে পৌঁছে দেওয়ার কাজ অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়েছে। এর জেরে পাইকারি বাজারে সব্জির দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও খুচরো বাজারে দাম চড়া। সাধারণ মানুষকে বেশি দামেই সব্জি কিনতে হচ্ছে। কোলে মার্কেটের আধিকারিক ও রাজ্য সরকারের খাদ্য সামগ্রী সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, এখানে বেশিরভাগ সব্জি কেজি প্রতি ২৫-৩০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরো বাজারে দামের কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরো বাজারে দ্বিগুণেরও বেশি দামে সব্জি বিক্রি হচ্ছে। তাঁর মতে, যানবাহন বন্ধ থাকা ও পুলিসি তল্লাশির ভয়ে পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে পণ্য কম যাচ্ছে। বেলা একটু বেড়ে গেলে কোলে মার্কেট থেকে মালপত্র যাওয়া আরও কমে যাচ্ছে। এই কারণে কোলে মার্কেটে প্রচুর সব্জি পড়ে থাকছে। এই অবস্থায় গ্রামের হাট থেকে জোগান কমানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন সব্জি ব্যবসায়ীরা। বুধবার ভোরের আগেই কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি জেলার গ্রামীণ হাট থেকে সব্জি বোঝাই এত বেশি লরি এসেছিল যে, সেই লাইন শিয়ালদহ থেকে বেলেঘাটা মেন রোডের রেল ব্রিজ পর্যন্ত চলে যায়। এত সব্জি বাজারে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।