বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
বাঙালির কাছে উত্তমকুমার যদি মহানায়ক হন তো সুচিত্রা হলেন মহানায়িকা। বাঙালির মনে সপ্তপদী ছবির রিনা ব্রাউনের মতো উদ্ধত যৌবনা ছবি হয়েই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। যখন বুঝলেন বয়সের কারণেই আর সেটা সম্ভব নয়, সরে গেলেন অন্তরালে। ১৯৭৮ সালে প্রণয় পাশা ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সুচিত্রা সেন প্রকাশ্যে বেরতে চাননি।
দেশের প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণার পরেই নেট দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে সুচিত্রার মিম। দেশের মানুষদের কাছে নেটিজেনদের অনুরোধ, খ্যাতি এবং যশের হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি যদি অন্তরালে থাকতে পারেন, তাহলে আমরা ২১ দিন মৃত্যুকে এড়াতে ঘরে থাকতে পারব না? বেঁচে থাকার উৎকণ্ঠা বাঙালিকে মিলিয়ে দিয়েছে মহানায়িকার অন্তরালের সঙ্গে।
এই প্রসঙ্গে সুচিত্রা সেনের ছায়াসঙ্গী সুমিত পাল বলেন, ‘স্বেচ্ছায় উনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। এই যে নিজেকে আড়াল করার ইচ্ছে তা নিয়ে কোনো ক্ষোভ ছিল না তাঁর মনে। সারা দিনটা খুব অনায়াসে কাটাতেন। সকালে উঠে নিজের বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটতেন। ৫২/৪/১ বাড়িটা তখনও ফ্ল্যাট হয়ে যায়নি। ২২ কাঠা জমির উপর বাড়ি ছিল। তবু সুচিত্রা সেন রাস্তায় প্রাতঃভ্রমণ করতেন। তারপর প্রাতঃরাশ। তবে খুব কম খাবার খেতেন তিনি। বরং দুপুর আর রাতের খাবারের দিকেই তাঁর নজর বেশি ছিল। পছন্দ ছিল সম্পূর্ণ আমিষ খাবার। পুজো করতেন দু’বেলা। কিন্তু তা কখনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে নয়। খুব বেশি হলে মিনিট পনেরো। এরপর কখনও মেয়ের বাড়িতে যেতেন। কখনও বা বেলুর মঠে। সেখানে গেলে অবশ্য মহারাজ তাঁকে পিছনের দরজা দিয়ে নিয়ে যেতেন। যাতে লোকের সামনে আসতে না হয়। আর বাড়িতে থাকলে সারাদিন টিভি দেখতেন। খবর শুনতেন বা অন্য অনুষ্ঠান দেখতেন। কিন্তু নিজের ছবি কিছুতেই দেখতেন না। যদি কোনও চ্যানেলে তাঁর ছবি দেখানো হতো, তাহলে সেটা পাল্টে দিতেন। দালের মেহেন্দির গান ছিল খুব প্রিয়। সময় পেলেই শুনতেন। এইভাবে ২১ বছর কেটে গিয়েছিল মায়ের। কখনও পরিস্থিতির প্রতি বিরক্ত হতে দেখিনি। আসুন এই সময়ে সুচিত্রা সেনকে অনুসরণ করে আমরা ২১ দিন ঘরে থাকি। আজ এই দুঃসময় সুচিত্রা সেনের দেখানো পথেই চলি। দেশের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হই। গৃহবন্দি থাকার অঙ্গীকার।’