রাহুল দত্ত, কলকাতা: বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। বনাঞ্চলে গাছপালা থেকে পাতা ঝরা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময় শুকনো পাতার বনাঞ্চলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থেকে যায়। আমাজন, রাশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলে বড়সড় আগুনের ঘটনাকে মাথায় রেখে শীতের আগেই দাবানল রুখতে প্রত্যেকটি রাজ্যকে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গও সেই তালিকায় রয়েছে। রাজ্য বনদপ্তর জানাচ্ছে, প্রতিবছরই শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে দাবানল রুখতে নজরদারি বাড়ানো হয়। এবছরও তা করা হয়েছে। একইসঙ্গে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চলগুলিতে কড়া নজরদারি রাখতে অস্থায়ীভাবে এক হাজার জন নিয়োগও করা হয়েছে।বনদপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘অগ্নিরক্ষক’ হিসেবে এই এক হাজার জনকে বিভিন্ন জায়গায় কয়েক মাসের জন্য নেওয়া হয়। প্রতিবছরই স্থানীয় গ্রামবাসী অথবা বনাঞ্চলের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মানুষকে এই কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়। বনকর্মীরা জঙ্গলের বিভিন্ন প্রান্তে নজরদারি চালান। বিশেষত তাঁরা সুগভীর জঙ্গলে বেশি নজরদারি চালান। কিন্তু, গ্রাম সংলগ্ন বনাঞ্চলেই বেশি অগ্নিকাণ্ডের সমস্যা এ’রাজ্যে দেখা যায়। সেই এলাকাতে নজর রাখতেই এই এক হাজার কর্মীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। বনদপ্তরের ওই কর্তা জানান, কেন্দ্রের পরামর্শ আসার আগেই রাজ্য এবিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছিল। ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষে জঙ্গলের আগুন রুখতে ৬৩.৭৪ লক্ষ টাকা রাজ্য মঞ্জুর করেছে। এছাড়াও বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে বাঁচাতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও রাজ্যকে ৯৫.৬১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই সময়ে বনের আগুন রুখতে পূর্ণাঙ্গ একটি ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, এ’রাজ্যে দাবানলের ঘটনা খুব একটা ভয়াবহ হয় না। কিন্তু, বিক্ষিপ্তভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণ বিভিন্ন জায়গাতেই এই সময় জঙ্গলে আগুন লাগে। বিশেষ করে জঙ্গলমহলের চার জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রামে গ্রাম লাগোয়া বনাঞ্চলে আগুনের ঘটনা হয়। একইভাবে উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ারে এই সমস্যা রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে অবশ্য নদীয়া, মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, সুন্দরবন, পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমানেও এরকম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। কেন্দ্রীয় তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে রাজ্যে বনাঞ্চলে মোট ১২৬টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। যার জেরে বনের প্রায় ৫.৩২ লক্ষ টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এবছর সেই পরিস্থিতিকে মোকাবিলাতেই আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।