কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
২৫ বছরের পলাশের সঙ্গে ১৯ বছরের প্রিয়ার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল। বাবা দূরে কর্মরত এবং মা-হারা প্রিয়া থাকত মামাবাড়িতে। পলাশের বাড়ি থেকে পণ চাওয়া হয়। যা দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে কন্যাপক্ষ বিয়ে ভেঙে দেয়। কিন্তু, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের পতিরাম এলাকার এই দুই পাত্রপাত্রী অন্যরকম ভেবেছিল। আচমকাই একদিন পলাশ প্রিয়াকে তার মামাবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বল্লা কালীবাড়িতে বিয়ে সেরে নেন। কিন্তু, দেড় বছর কাটার আগেই সেই কাহিনী অন্যদিকে মোড় নেয়।
২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট প্রিয়া গুরুতরভাবে অগ্নিদগ্ধ হন। পলাশ ও তাঁর মাও আংশিক অগ্নিদগ্ধ হন। পরের দিন হাসপাতালে ৯০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ প্রিয়ার মৃত্যু হয়। পলাশ প্রায় দু’সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ছাড়া পান। পুলিস তখনই তাঁকে গ্রেপ্তার করে। কারণ, প্রিয়ার মামারবাড়ি থেকে ঘটনার পরই অভিযোগ করা হয়েছিল যে, আরও ৫০ হাজার টাকা এবং তিন ভরি সোনা চেয়ে প্রিয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই অভিযোগের জেরে পলাশের বাবা-মা, দাদা-বউদিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আনা হয় খুনের অভিযোগ। বালুরঘাটের আদালত বাকিদের অভিযোগ থেকে ছাড় দিলেও পলাশকে ১০ বছর কারাবাসের নির্দেশ দেয়। সে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে। তার আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় আদালতকে জানান, মূলত প্রিয়ার মামা ও মামিমা’র বয়ানের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত ওই সাজা দিয়েছে। অথচ, মামলায় মোট সাক্ষী ছিলেন ১৮ জন। যাঁদের প্রায় সকলেই বলেছেন, পলাশ ও তার মা’র সঙ্গে প্রিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল। ঘটনার দিন প্রিয়া মামাবাড়ি যেতে চেয়েছিল। চট করে রেগে যাওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন প্রিয়া হয়ত হঠাৎ করেই ওই কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। কিন্তু, স্ত্রীকে জ্বলতে দেখে পলাশ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেই কারণেই তিনি দু’সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। তাঁর মাও ছেলে-বউমাকে রক্ষা করতে গিয়ে অল্পবিস্তর অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু, পুলিস এই বিষয়গুলিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি। এমনকী আরও পণ যে চাওয়া হয়েছিল, তার কোনও প্রমাণ অভিযোগকারী দেননি। প্রিয়াকে অত্যাচার করা হতো, তারও কোনও তথ্য বা প্রমাণও নেই। এই অবস্থায় স্রেফ মনগড়া কাহিনীর ভিত্তিতে একটি নিরপরাধ যুবককে কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।