কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুর এলাকার নিমাইনগর এলাকার বাসিন্দা কৌশিক কর্মকার পারিবারিক সোনার দোকান চালিয়ে দ্রুত সাফল্য অর্জন করছিলেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি গাড়ির কিছু কাজ সেরে নিজেই ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরছিলেন। বিয়ে করেছিলেন বিবাহ বিচ্ছিন্না রিয়াদেবীকে। তিনি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সাতদিনের মধ্যেই রিয়া আত্মহত্যা করেন। কিন্তু, কেন মারা গেলেন কৌশিক, এই প্রশ্নে পুলিসের কাছ থেকে যুক্তিসম্মত উত্তর না পেয়ে শ্যামলীদেবী হাইকোর্টে আসেন। পুলিসকে তিনি জানিয়েছিলেন, বউমা বলেছিল, তার আগের স্বামী তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। গাড়ি দুর্ঘটনার তত্ত্ব খাড়া করতে চাইলেও পুলিস আদতে কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনা যেখানে হয়, তাঁদের কিছু না জানিয়ে সেখান থেকে গাড়িটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দু’দিন পর গাড়িটির হদিশ মেলে। রাতারাতি তথাকথিত দুর্ঘটনাস্থল ধুয়েমুছে সাফ করে দেওয়া হয়। কিন্তু, একক বিচারপতি সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী রায়ে জানিয়ে দেন, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণেই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এই রায় শ্যামলীদেবী দুই বিচারপতির বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করেন।
তাঁর আইনজীবী অচ্যুত বসু আদালতকে জানান, পুলিসি দাবি মেনে নিয়ে একক বিচারপতি যে সিদ্ধান্তে এসেছেন, তা কিছুতেই যুক্তিসম্মত নয়। প্রথম কারণ, মৃতের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কোথাও বলা নেই, যুবক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। পুলিস স্রেফ কয়েকজনের বয়ান নথিভুক্ত করে আদালতে পেশ করে দাবি করে, কৌশিকবাবু মদ্যপান করতেন। পুলিসের এই দাবি সত্যি হলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে নিশ্চিতভাবে তার উল্লেখ থাকত। দ্বিতীয়ত, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করা হয়েছে প্রায় ছ’মাস পর। কেন? কোন কারণে পুলিস ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি রাতারাতি সরিয়ে ফেলেছিল? দুর্ঘটনাস্থল হিসেবে যে জায়গাটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখান থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরে গাড়ির হেডলাইটের ভাঙা টুকেরা এল কীভাবে? এর পিছনে কোনও অসৎ উদ্দেশ্য যে নেই, কিছু যে লুকনো হচ্ছে না, তা কি হলফ করে বলা যায়?
এই প্রেক্ষাপটে বেঞ্চ তার অন্তর্বর্তী রায়ে বলেছিল, প্রাথমিক দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ‘ওই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুধু ভুল পথেই পরিচালিত হয়নি, তা প্রতারণার শামিল। মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলেই মৃত যুবক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন, এই তত্ত্ব রাজ্য কীভাবে আদালতকে বিশ্বাস করাবে! এমন কোনও প্রমাণ নেই, যাতে বলা যায়, ওই ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। যদিও বানানো কিছু বয়ান সংগ্রহ করা হয়েছে। বেঞ্চ এও বলেছে, মৃতের মোবাইল ফোন সংগ্রহ করা হয়নি। শেষ কোন নম্বরগুলি থেকে তাঁর কাছে ফোন বা মেসেজ এসেছিল বা গিয়েছিল, তা সংগ্রহ করার চেষ্টাই করেনি পুলিস। কোথায় তিনি মদ্যপান করেছিলেন, কারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তা নিয়েও কোনও তদন্ত হয়নি। কাউকে আড়াল করতে বা সত্য যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সেইমতো তদন্ত করা হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।