নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, বিএনএ, কোচবিহার: কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়েও সংঘাত তুঙ্গে উঠল। এই সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার এবং উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁর অগোচরে আজ শুক্রবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় উপাচার্যকে শো-কজ নোটিস ধরালেন ধনকার। প্রায় নজিরবিহীন এই পদক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে। অবৈধ কাজ করায় আচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও স্ট্যাটিউট (বিধি)-কে হাতিয়ার করে তিনি কেন তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করে উপাচার্যকে অপসারণ করবেন না, তা জানতে চেয়েছেন ওই শো-কজ চিঠিতে। দু’সপ্তাহের মধ্যে এই শো-কজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে দেবকুমারবাবুকে। পাশাপাশি আগামী ২৮ তারিখ রাজভবনে এসে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতেও বলা হয়েছে তাতে।
রাজ্যপালের তরফে কোনও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এভাবে শো-কজ করার ঘটনা কার্যত বিরল বলেই মনে করা হচ্ছে। ধনকার কয়েকদিন আগে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য পলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্ট্যাটিউট সংক্রান্ত বিষয়ে শো-কজ করার জন্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরকে বলেছিলেন। যদিও সেই জল বেশিদূর গড়ায়নি। তবে এবার রাজ্যপাল এতটাই চটেছেন যে, আইন ও বিধি অনুযায়ী নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি সরাসরি দেবকুমারবাবুকে শো-কজের রাস্তায় হেঁটেছেন। আর তাতেই এ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিন দেবকুমারবাবু অবশ্য বলেন, আমি এই ধরনের কোনও চিঠি এখনও পাইনি। তাই এনিয়ে আমার কোনও ধারণা নেই। কারও ট্যুইট দেখে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। যদি ওই ধরনের কোনও চিঠি আসে, তাহলে ১৪ দিন সময় হাতে আছে। যাই হোক না কেন, শুক্রবার সমাবর্তন হবেই। বিধানসভার অধিবেশনের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ছাড়া বাকি তিন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে থাকবেন। আগেও বলেছি, আবারও বলছি, আমরা রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি বিধি মেনেই। কিন্তু কোনও জবাব পাইনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, এই রাজ্যপাল সর্বদা একটা বিতর্কের মধ্যে থাকতে চান। মনে হচ্ছে, বিতর্কে জড়িয়ে থাকতেই উনি ভালোবাসেন। তাই এ ধরনের পদক্ষেপ করেছেন।
রাজভবন থেকে জারি করা প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত আইনের ৯ (৭) এবং স্ট্যাটিউটের ১৫৩ (২) নং ধারা কাজে লাগিয়ে রাজ্যপাল এই শো-কজ নোটিস ইস্যু করেছেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের সভাপতি তথা আচার্যকে কোনও তথ্য না জানানোর জন্যই তিনি এই কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে তাতে। এই ধরনের পক্ষপাতমূলক অবস্থান এবং চরম গাফিলতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে উপাচার্যকে অপসারণ করাই সমীচীন বলে মনে করছেন তিনি। নিয়ম মেনে তাঁর এই পদক্ষেপের কথা রাজভবনের সচিবালয় থেকে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের প্রধানসচিব মণীশ জৈনকেও জানিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, মণীশবাবুকে ধনকারের এই পদক্ষেপের কথা বিধি মেনে উপাচার্যকেও জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্যের পাশে সরকার পুরোপুরি দাঁড়িয়ে গেলে সংঘাত চরম আকার নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে আইন-আদালত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।