বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
উচ্চপদস্থ ওই আমলার এমন এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ বাতিল করার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আদালত জানিয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তির এমন সার্টিফিকেট সম্পর্কে অভিযোগ ওঠে, তাহলে বাধ্যতামূলকভাবে তা ওয়েস্ট বেঙ্গল এসসি অ্যান্ড এসটি (আইডেন্টিফিকেশন) অ্যাক্ট, ১৯৯৪ অনুযায়ী গঠিত ‘স্টেট স্ক্রুটিনি কমিটি’র কাছে পাঠাতে হবে। কারণ, কোনও ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান নির্ণায়ক যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল, তা বিভিন্নভাবে যাচাই করার আইনি ক্ষমতা কেবল ওই কমিটির আছে। ওই কমিটিই তথ্য সংগ্রহ বা যাচাই করবে, তদন্ত চালাবে, সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপ করবে। তাই এসডিও যেখানে মামলাকারীদের বিষয়টি যাচাই করার জন্য পাঠিয়েছিলেন, তা আইনত গ্রহণযোগ্য নয়।
মামলাকারীরা ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর এসডিও’র জারি করা নির্দেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তাঁদের আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য আদালতকে জানান, সমাজের মূলস্রোত থেকে দূরে থাকা তফসিলি জাতি বা উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখে জীবনধারণের স্বার্থে এমন সার্টিফিকেট দেওয়ার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অনুসরণ করে দেওয়া হয়। মামলাকারীরা ‘বাগতি’ সম্প্রদায়ভুক্ত। যা ভূমিজ/মুণ্ডা উপজাতি সমাজের একটি ‘সাব-গ্রুপ’ বা উপধারা। আসলে এই বাগতি সম্প্রদায় সাধারণভাবে বাগদি নামে পরিচিত। যে পদ্ধতিতে এঁদের জাতিগত পরিচয়জ্ঞাপক সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে, তা বেআইনি।
রাজ্য সরকারের তরফে আদালতকে জানানো হয়, মামলাকারীদের সার্টিফিকেট সম্পর্কে অভিযোগ আসার পর বিষয়টি স্টেট স্ক্রুটিনি কমিটির কাছে পাঠানো উচিত ছিল। তাই সেই কমিটির রিপোর্ট ছাড়াই সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য এসডিও’র নেওয়া সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে বেআইনি। সরকারপক্ষ অভিযোগে সায় দিলেও মামলায় যুক্ত এক প্রতিপক্ষের তরফে বলা হয়, রাজ্য সরকারের কালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার দপ্তরে বিষয়টি পাঠানো হয়েছিল। সেই সূত্রে বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়েছে। আরও বলা হয় যে, মামলাকারীরা নিজেই তফসিলি জাতি হিসেবে সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এই আবেদন সূত্রেই তাঁদের তফসিলি উপজাতি হিসেবে পাওয়া সার্টিফিকেট বাতিল হওয়া উচিত।
এই প্রেক্ষাপটে আদালত রায়ে বলেছে, যে সরকারি দপ্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে, সেটির সম্পর্কিত মূল্য নেই। বিশেষত এই বিতর্ক সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। এমন বিতর্ক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র ওই কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। তার কোনও বিকল্প নেই। তাই যে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজনের মূল্যবান অধিকার কেড়ে নেওয়া হল, যার ফলে তাঁর বা তাঁদের জীবনযাপন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হল, বেঁচে থাকার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হল, তা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন ক্ষেত্রে দেওয়ানি আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এবং তা বাধ্যতামূলক।
এসডিও’ নির্দেশ খারিজ করে আদালত জানিয়েছে, ওই নির্দেশের পরবর্তী ক্ষেত্রে যদি কোনও পদক্ষেপ করা হয়ে থাকে, তাও কার্যকর হবে না। তবে মনে করলে এসডিও বিষয়টি স্টেট স্ক্রুটিনি কমিটি’র কাছে পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে কমিটি আইনানুগ পদ্ধতিতে পদক্ষেপ করবে।