নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এনআরসি-সিএএ ইস্যুকে সামনে রেখে নিজেদের ভেঙে পড়া সংগঠনকে খানিকটা হলেও ফের চাঙা করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে সিপিএম নেতৃত্ব। সেই ইতিবাচক ছবিকে কাজে লাগিয়ে এবার পুরভোটের প্রস্তুতিও তারা সেরে ফেলতে চাইছে। সেই লক্ষ্যে সোমবার শহিদ মিনারে দলের কলকাতা জেলা কমিটি আয়োজিত সমাবেশ থেকেই পুরভোটের প্রচারের ঢাক বাজিয়ে দিলেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কথায়, বড় একটা সমাবেশ করেই আত্মসন্তুষ্ট হলে চলবে না। সিএএ বা এনআরসি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিজেপি বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাকে এবার পুরভোটের জন্য কাজে লাগাতে হবে। এজন্য দরকার বুথভিত্তিক সংগঠন। ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে নিয়ে বুথ আগলাবার জন্য এখন থেকে তৈরি হতে হবে।
রাজ্যে পালাবদলের পর দলের জেলা কমিটির তরফে এই প্রথম শহিদ মিনার ময়দানে সমাবেশ করল সিপিএম। তাই সভায় ভিড় করানোর চ্যালেঞ্জ ছিল তাদের। সমাবেশে ভিড় দেখে সূর্যকান্ত মিশ্র বা অপর পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে কল্লোল মজুমদার, কনীনিকা বোস ঘোষ, অনাদি সাহু, দেবাঞ্জন চক্রবর্তীরা বক্তৃতার সুর সপ্তমে চড়াতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। শ্রমিক, কৃষকসহ সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, বিলগ্নিকরণ বা শহরের উন্নয়নের মতো নানা ইস্যুর কথা তুলে ধরলেও প্রত্যাশিতভাবে বক্তাদের ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য ছিল এনআরসি-সিএএ-এনপিআর। আর তা নিয়ে সকলেরই বক্তব্যে টার্গেট ছিল কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকার। ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এনআরসি-সিএএ নিয়ে সুর চড়াতে গিয়ে ভিড়ে ঠাসা সমাবেশের সুযোগ গ্রহণ করেন সূর্যবাবু। তিনি বলেন, ক্ষমতা হারানোর পর শুধু জেলা কমিটির ব্যানারে শহিদ মিনার ময়দানে এত বড় সমাবেশ করার নজির ছিল না। তবে বড় সমাবেশ করে আত্মসন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই আমাদের। সামনেই পুরসভার ভোট। রমজানের আগে বা পরে কোনও এক সময় এই নির্বাচন হবে। এনআরসি-সিএএ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। এবারের পুরভোটে আমরা বামপন্থীরা বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে থাকা বাকি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক দলগুলি মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ব বলে ঠিক করেছি। তাই বুথওয়ারি মজবুত সংগঠন তৈরি করার জন্য এই সব শক্তির সমর্থকদের নিয়ে এগতে হবে। সেই কাজ কাল থেকেই শুরু করতে হবে।
এদিন সূর্যবাবু-সেলিমরা চাঁচাছোলা ভাষায় মোদি ও মমতার সমালোচনা করেন। অহরহ কুকথা বলার জন্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ গেরুয়া শিবিরের বাকি নেতাদেরও কাঠগড়ায় তোলেন। তাঁদের কথায়, এনআরসি-সিএএ-এনপিআর নিয়ে মোদিরা দেশকে আরও একবার ভাগ করতে চাইছেন। তবে দেশজুড়ে মানুষ যেভাবে এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে, তাতে ওঁরা সহজে একাজ করতে পারবেন না। তাই নানাভাবে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন এখন। বাংলায় বামপন্থীরা যতদিন আছে, ততদিন এসব হবে না। জনগণনা করতে আসা সরকারি কর্মীরা এনপিআর নিয়ে প্রশ্ন করলে তাঁদের মুখের উপর ‘জবাব দেব না’ বলে দেবেন।