বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
জমি-বাড়ির দলিল হোক বা অন্যান্য মূল্যবান স্থাবর সম্পত্তি, কেনাবেচার সময়ে রাজ্যের রেজিস্ট্রি অফিসগুলিতে তা নথিভুক্তিকরণ হয়। এই কাজে ‘কপিরাইটার’দের ভূমিকা এতদিন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এই কাজের জন্য তাঁদের লাইসেন্সও নিতে হয়, উপযুক্ত যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে। এঁরা কাজটি করেন মূলত হাতে। সেই প্রাচীন ব্যবস্থায় সম্প্রতি পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সূত্রে বেশ কয়েকটি নোটিস ও নির্দেশিকাও জারি হয়। সংশোধিত হয় ১৯৬২ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল রেজিস্ট্রেশন রুলস। কমিশনার অব স্ট্যাম্প রেভিনিউ-এর আইজি ছাড়াও রানাঘাট ও ডোমকলের এডিএসআর পদাধিকারীরাও এই প্রসঙ্গে নির্দেশ জারি করেন। সেগুলি চ্যালেঞ্জ করেন কপিরাইটার বিভাস সাহা ও অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, সরকারি নির্দেশগুলিতে সাফ জানানো হয়েছিল, যাবতীয় দলিল (ক্রয়-বিক্রয়, দান ইত্যাদি সংক্রান্ত) ও নথি খুব শীঘ্রই অনলাইনে নথিভুক্তিকরণ করার ব্যবস্থা চালু করা হবে। সেখানে স্বাক্ষরও নেওয়া হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এমনকী সেইসব নথির ‘ট্রু-কপি’ বা নকলও একই পদ্ধতিতে চালু করা হবে। মামলাকারীদের তরফে আইনজীবী আশিস সান্যাল, রাজেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপ্তজ্যোতি চক্রবর্তী আদালতে দাবি করেন, ৯ ডিসেম্বরের নোটিসটি রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছে। যার ফলে কপিরাইটারদের ভূমিকা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও পেশা বেছে নিয়ে জীবিকা অর্জন করার অধিকার এমন সব নির্দেশের ফলে স্রেফ ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এমনকী এই নয়া ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কপিরাইটারদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিও সরকার বাতিল করে দিয়েছে। যা অন্যায়। যদিও রাজ্যের তরফে এইসব দাবি ও অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে রায়ে বলা হয়েছে, প্রাসঙ্গিক আইনে কপিরাইটারদের ভূমিকা ‘মার্জিনাল’ বা প্রান্তিক। কোনওভাবেই আবশ্যিক নয়। কিন্তু, ‘ট্রু-কপি’ও কম্পিউটারের মাধ্যমে দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশ দেওয়ার আইনি ক্ষমতা ওই আইজি’র নেই। আদালত মনে করে, যে বিরোধ এক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে, তা সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত চিরকালীন এক ব্যাধি। টাইপরাইটার আসার পরও দলিল লেখকরা এই সমস্যার সামনে পড়েছিলেন। আবার কম্পিউটার আসার পর সমস্যায় পড়েন টাইপিস্টরা। তাই কপিরাইটারদেরও নয়া প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
৯ ডিসেম্বরের নির্দেশিকা বহাল রেখে ১১ নভেম্বরের যে সরকারি নির্দেশে কপিরাইটারদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি তোলা হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, যদি প্রত্যেক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য সমাজের কোনও এক প্রান্তিক শ্রেণীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তাহলে মুখ্য উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। কারণ, নয়া ব্যবস্থার ফলে যে লাভ ও সুবিধা হবে, তা খেয়ে নেবে ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা।
১১ নভেম্বরের নির্দেশ প্রসঙ্গে আদালত আরও বলেছে, ‘ট্রু কপিস রুলস’ এখনও বাতিল হয়নি। তাই দলিল দস্তবেজের নকল করা ও রাখার পুরনো ব্যবস্থা রেজিস্ট্রেশন অফিসগুলিতে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য থাকছে। ফলে মামলাকারীদের প্রাসঙ্গিক চ্যালেঞ্জ খারিজ করা হল। কিন্তু, ২ জানুয়ারির নির্দেশনামা অনুযায়ী যা বলা হয়েছে, তা ৯ ডিসেম্বরের সরকারি নির্দেশিকা বা সংশোধনী অনুযায়ী বেঠিক। ই-ডিড প্রসঙ্গে সেখানে বলা ছিল, নয়া ব্যবস্থায় বিষয়টি ঐচ্ছিক। তাই ‘ঐচ্ছিক’-এর পরিবর্তে ‘বাধ্যতামূলক’ শব্দটি ব্যবহার করা মাত্রই সংশোধনীর উদ্দেশ্য পরাজিত হচ্ছে। ফলে তা বাতিল করা হল।