বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
‘আখাঞন জাতরা’ অর্থাৎ সূর্যের উত্তরায়ন যাত্রা শুরু। পয়লা মাঘে বাৎসরিক এই যাত্রা। তাই এই দিনটি জঙ্গলমহল আদিবাসী, আদি জনজাতিদের কাছে বছরের প্রথম দিন। নববর্ষ। আদিকাল থেকে চলে আসা এই প্রথা এখনও টিকে রয়েছে জঙ্গলমহলে। বাংলা নববর্ষে পয়লা বৈশাখ, বা ইংরেজি নিউ ইয়ার পালনের উন্মাদনা খুব একটা দেখা যায় না পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম জেলায়। জঙ্গলমহলে গত কয়েক বছর ধরে কুড়মি জনজাতি যেহেতু নিজেদের জাতিসত্ত্বার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। তাই ‘আখাঞন জাতরা’ পালনে আদি জনজাতিরা আরও বেশি উন্মুখ।
আদি জনজাতিরা বরাবরই প্রকৃতি পূজায় বিশ্বাসী। প্রকৃতি রক্ষায় তারাই সর্বদা এগিয়ে থাকে। নতুন বছরের প্রথম দিনে যা রীতি, নীতি সবই প্রকৃতিকেন্দ্রিক। কোথাও হল পাহাড় পুজো, কোথাও আবার গরাম থানে গাছ পুজো। পাহাড়, গাছকে দেওয়া হল মাটির ঘোড়া। উড়িয়ে দেওয়া হল পায়রা, মোরগ। আদি জনজাতির মানুষরা নিজেরাই পুরোহিত সেজে পূজার্চনা করেছেন। এদিন থেকেই শুরু হয়েছে কোনও কোনও গ্রামে ভানসিং পুজো। ভানসিং অর্থাৎ সূর্যকে আরাধনা।
বছর প্রথম দিনে প্রতিটি সাঁওতাল গ্রামে ‘মাঝি’ পরিবর্তনের রেওয়াজ রয়েছে। মাঝি অর্থাৎ গ্রামের প্রধান। কিন্তু, এখন পরিবর্তন খুব একটা হয় না। বেশির ভাগ গ্রামেই মাঝিদের এক্সটেনশন দেওয়া হয়!
কুড়মি সমাজে ‘আখাঞন জাতরা’কে ঘিরে আবেগটা বেশি। বছরের প্রথম দিনেই যে কোনও শুভ কাজ শুরু করে তারা। ‘আড়াই পাক’ লাঙল দেওয়া, বা মাটিতে কোদাল চালানো সবই রীতি মেনে। পাত্র পাত্রী দেখার জন্য এই দিনটাকেই বেছে নেয় আদি জনজাতিরা। বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ কিরীটি মাহাত বলেন, আদিকালে যখন ক্যালেণ্ডার বা পঞ্জিকা ছিল না, চাঁদ বা সূর্যকে দেখে দিন, মাস গোনা হত। এখনও সেই আদি প্রথা চলে আসছে। সূর্যের উত্তরায়নে যাত্রা শুরুর দিনটাই বছরের প্রথম দিন। ১ মাঘই হল আমাদের নববর্ষ। কৃষি কাজের সূচনার দিন। তাই বছরের প্রথম দিনই পাহাড়, গরাম থানে গাছ পুজোর রীতি।