গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
খালি গা। বড় দাড়ি। চোখের ভাষা অতলস্পর্শী। জানালেন, রাতের খাবার বসিয়েছেন। সব্জির স্যুপ। সারাদিনে একবারই ‘সেবা’ করেন। সারারাত জাগবেন। ভোরে স্নান করার পর স্যুপ এবং শ্যামা চালের ভাত খেয়ে ফের ডেরায় বসবেন। এমন রুটিন কেন? জানালেন, উত্তর ২৪ পরগনায় বাড়ি। আসল নাম নিত্যানন্দ ভট্টাচার্য। ঘর ছেড়েছেন সেই ১১ বছর বয়সে। তারপর ৩০ বছর কেটে গেল। কখনও কামাক্ষা। কখনও গঙ্গাসাগর। কখনও বা কাশী-বারাণসী। হিমালয়েও ছিলেন কয়েক বছর। কীসের খোঁজে ঘুরছেন? ‘মানুষের খোঁজে দাদা।’ জানালেন থানাপতি বাবা। গ্যাসস্টোভ, প্রেসার কুকার সম্পর্কে জানতে চাইলে বললেন, ‘ এইসব তো লাগে। কাঠ জ্বালাই না। পরিবেশ দূষিত হয়। যখন পাহাড়ে যাই, স্টোভ, কুকার, ওভেন এইসব নিয়ে যাই।’ অত্যাধুনিক সরজ্ঞাম সব তুলে তুলে দেখালেন।
অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। থানাপতি বাবা বললেন, ‘আপনার ফোন নম্বর দেবেন! হোয়্যাটস অ্যাপে অ্যাড করে নেব।’ আপনি হোয়্যাটস অ্যাপ ব্যবহার করেন? প্রশ্ন করতেই যেন অবাক হলেন। গলায় বিরক্তির সুরে বললেন, ‘করব না? ফেসবুকেও আছি। আমার নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। চাইলে সার্চ করতে পারেন। ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সুবিধা হয়। আর তাছাড়া, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে তো।’ ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট দেখিয়ে জানালেন, ভোট দিতে গ্রামের বাড়িতে যান। উত্তর ২৪ পরগনার কোথায় বাড়ি খোলসা করলেন না। কথা বলতে বলতে কল্কেতে টান দিলেন।
তাঁরই আর সঙ্গী অন্য একটি কল্কে সাজাতে ব্যস্ত। কয়েক টান দেওয়ার পর জিভ কেটে বললেন, ‘এত ঠান্ডা। টিকব কী করে? কিছু একটা জোগান দিতে হবে তো?’ তাঁর কথা শেষ হওয়ার আগেই আরও কয়েকজন নাগা সন্ন্যাসী কল্কের ভাগ চাইতে হাজির হলেন। কারও সঙ্গে হিন্দি, কারও সঙ্গে ভোজপুরী ভাষায় সহজে বাক্যালাপ চালিয়ে গেলেন। এক সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর হাইটেক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান দেখে ঘোর কাটছিল না। রাতের সঙ্গে হিমেল হাওয়ার প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় হাঁটা লাগালাম। পিছনে শুনতে পেলাম থানাপতি মহন্ত নিত্যানন্দগিরির বিদায় সম্ভাষণ, ‘আবার আসবেন দাদা।’ সত্যিই বিচিত্র গঙ্গাসাগর মেলা। বিচিত্র তার মানব সাগর।