নিজস্ব প্রতিনিধি, দীঘা ও বিএনএ: নাগরিক সংশোধনী বিলকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ অসম সহ উত্তর-পূর্বের আঁচ এসে পড়ল পশ্চিমবঙ্গেও। এতদিন যা ছিল নেতাদের হুঁশিয়ারি, বুধবার বিল পাশের পর তাতেই পড়তে চলেছে আইনের সিলমোহর। এই পরিস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরে যখন লক্ষ্যপূরণের উল্লাস, তখন মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম সহ গোটা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ আতঙ্কের গ্রাসে। নাগরিকত্ব সংশোধনী এবং এনআরসি’র মোকাবিলায় রণকৌশল ঠিক করতে আগামী ২০ ডিসেম্বর জরুরি বৈঠক ডাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূলের সব বিধায়ক, সংসদ সদস্য এবং জেলা সভাপতিদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনআরসির থেকে বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে তিনি যে শেষ পর্যন্ত যাবেন, তা আগেও বারবার বলেছেন। এই অবস্থায় জেলায় জেলায় বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভের ঘটনা কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছে তাঁকে। তাই ইতিমধ্যেই রাজ্যের পরিস্থিতি সামাল দিতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে সব জেলার শীর্ষ আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নাগরিকত্ব সংশোধনী নিয়ে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেও প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাজ্যসভার ইলেক্ট্রনিক স্কোরবোর্ডে বিলের পক্ষে ১২৫ ফুটে উঠতেই শুরু হয়ে যায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ। রাতেই এনআরসির প্রতিবাদে রাস্তায় নামে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের মুগবসান এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল। বিক্ষোভকারীদের মুখে ‘কালা আইন মানছি না, মানব না’ স্লোগান। বৃহস্পতিবার সকাল হতেই এনআরসিকে ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় বিক্ষোভ ও মিছিল। এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভকে ঘিরে এদিন উত্তেজনা ছড়ায় বীরভূমের মুরারইয়ে। বিক্ষোভকারীরা মুরারই স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও লাইনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। আটকে যায় ট্রেন। আধ ঘণ্টা পর মিছিল যায় ভাদিশ্বর মোড়ে। শুরু হয় বোলপুর-রাজগ্রাম রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ। পুলিসের অনুরোধে সেখানে প্রতীকী বিল পুড়িয়ে এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ শেষ হয়।
এনআরসি বিরোধীরা এদিন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বরজ থেকে জাতীয় সড়ক ধরে মিছিল করেন। ওমরপুরে গিয়ে শুরু করেন রাস্তা অবরোধ। পোড়ানো হয় অমিত শাহের কুশপুতুল। সৃষ্টি হয় যানজটের। এরপর সেই মিছিল যায় দাদাঠাকুর মোড়ে। সেখানে শুরু হয় বিক্ষোভ। এদিন বিকেলে বিক্ষোভ দেখানো হয় বেলডাঙা ও সালারে। তৃণমূলও এনআরসির প্রতিবাদে জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারের ক্যালটেক্স মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। সভা করা হয় ইংলিশবাজারে। মেদিনীপুর শহরে মিছিল ও বাঁকুড়ার সোনামুখীতে হয় সভা। এনআরসি ও নাগরিক সংশোধনী ফায়দা তুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরও নামে ময়দানে। বিলকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি ‘বিজয় মিছিল’ বের করে। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি, তালডাংড়া, রাইপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় বিলের সমর্থনে মিছিল বের করে। নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, কল্যাণীতেও মিছিল করে।