কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
গত ২৫ নভেম্বর মাঝরাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার অন্তর্গত বহড়ুর ধিবেরহাটে জমিদার বাড়ির মন্দিরের গ্রিল কেটে ১৪১ বছরের প্রাচীন অষ্টধাতুর দুর্গা ও লক্ষ্মী মূর্তি রহস্যজনকভাবে চুরি যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে চুরি যাওয়া ওই অষ্টধাতুর দুটি মূর্তির দাম কমপক্ষে দু’কোটি টাকা। এনিয়ে পরের দিনই জয়নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের লোকজন।
জয়নগর থানার পাশাপাশি এই ‘অ্যান্টিক’ দুর্গা ও লক্ষ্মী মূর্তি চুরির তদন্তে নামেন সিআইডি’র গোয়েন্দারা। পাশাপাশি, সতর্ক করা হয় কলকাতা পুলিসের অ্যান্টি বার্গলারি স্কোয়াডের গোয়েন্দাদের। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের অনুমান, ১৮৭৮ সালে তৈরি অষ্টধাতুর ওই মূর্তি দুটি চোরাপথে বিদেশে পাচার হয়ে থাকতে পারে। তাই বারুইপুর জেলা পুলিসের পক্ষ থেকে রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলার থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৭৮ সাল থেকে ওই জমিদার বাড়ির নাটমন্দিরে নিত্যপুজো হতো একচালার অষ্টধাতুর দুর্গা প্রতিমার। চুরি যাওয়া ওই দুর্গা প্রতিমার ওজন ৯০ কেজি। উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট। আর লক্ষ্মী মূর্তির ওজন ৩০ কেজি। উচ্চতা দেড় ফুট। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বহড়ুর এক বাসিন্দার কথায়, এখানকার বাজারহাট থেকে চায়ের দোকান সব জায়গাতেই চর্চায় উঠে আসছে মূর্তি চুরির ঘটনা।
এই প্রথম নয়। এর আগে ২০০৬ সালে এই জমিদার বাড়ির মন্দির থেকেই চুরি গিয়েছিল এই দুর্গা মূর্তি ও অসুরের মূর্তি। সেবার অবশ্য চোরেরা অষ্টধাতুর অসুরকে নিয়ে পালিয়ে গেলেও ৯০ কেজি ওজনের দুর্গা মূর্তিটি পুকুরে ফেলে পালায়। পরে তদন্তে নেমে পুলিস চুরি যাওয়া অসুর মূর্তি উদ্ধার করে এবং চোরদের গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারের মন্দির থেকে মদনমোহনের বিগ্রহ চুরি যায়। ওই বিগ্রহ চুরির ঘটনায় তখন রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। আবার, ২০০৪ সালে কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘর থেকে পঞ্চম শতাব্দীর বালিপাথরের তৈরি আবক্ষ বুদ্ধ মূর্তিটি চুরি হয়। ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ শান্তিনিকেতন থেকে চুরি যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক। সিবিআই থেকে সিআইডি—কেউই সেই নোবেল চুরির কিনারা করতে পারেনি।
এরাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূমের মতো জেলায় ‘অ্যান্টিক’ দ্রব্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর পিছনে চোরদের কোনও বড়সড় চক্র রয়েছে বলে অনুমান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুরি করা ‘অ্যান্টিক’ সামগ্রী চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে হয় বাংলাদেশ, না হয় হংকং হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছয়। আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ায় অ্যান্টিক সামগ্রীর বড় মার্কেট রয়েছে। নজরদারির অভাবে ফি বছর ভারত থেকে গড়ে এক হাজার অ্যান্টিক মূর্তি চোরাপথে বিদেশে পাচার হয়ে যায়।