বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
তুমুল হর্ষধ্বনি, করতালি আর নাগাড়ে বাজা ধামসা-মাদলের বোলের মাঝে মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেন, এনআরসি এবং ক্যাব- একই মুদ্রার দুই পিঠ। তবে ভয় পাবেন না। যার যত বড়ই স্লোগান থাকুক না কেন, দেশের থেকে বড় কিছুই হয় না। আমরা সবাই এদেশের নাগরিক। নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কিছু কিছু কাগজ প্রত্যেকেরই আছে। তবে কীসের ভয়? জনতার মেজাজ বুঝে মমতার কণ্ঠে এবার দুটি লাইন— সারে জাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থা হামারা। গত ৬ ডিসেম্বর কলকাতার মেয়ো রোডের জমায়েত থেকে এনআরসি এবং ক্যাব ঠেকাতে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের’ ডাক দিয়েছিলেন। এদিন তাঁর গলায় এখানে এনআরসি এবং ক্যাব হচ্ছে না, হতে দেব না— শোনা মাত্রই উদ্বেল হয়ে ওঠে জনতা। গেরুয়া আধিপত্যকে উচ্ছেদ করে রেল শহর যেন প্রায়শ্চিত্ত করল। ফি বছর দশেরার দিন রাবণ দহনের মাঠ যেন তখন প্রতীকী। এবার মমতার দীপ্ত ঘোষণা, নো এনআরসি, নো ক্যাব। নো ডিভাইড অ্যান্ড রুল। এখানে আমরা সবাই এক। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গড়ব বাংলা। এখানে যাঁরা আছেন, জানবেন, এটাই পরিবার, এখানেই আত্মীয়তা।
উপনির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের যে নির্যাস পদ্ম শিবিরের পতনের কারণকে দর্শিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ভারতীয় রেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাসিন্দাদের মতামত। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রেল কলোনিকে আতঙ্কিত করেছে বেসরকারিকরণ। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খড়্গপুরের সামগ্রিক উন্নয়ন থমকে যাওয়ার বিষয়টিও। বক্তৃতায় দুটি ইস্যুকেই উত্থাপন করেছেন মমতা। বলেছেন, খড়্গপুরের ৯০ শতাংশ জমি রেলের। দু’দুবার রেলমন্ত্রী ছিলাম, এই শহরটাকে জানি। রেল কর্মীদের এই শহরের ভবিষ্যৎ বিপন্ন। রেলকে বেচে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ভয় কীসের। যদি এরকম হয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। আর শুধু রেল কেন, ব্যাঙ্ক, বিএসএনএল, এয়ার ইন্ডিয়া সহ রাষ্ট্রায়ত্ত বহু সংস্থা বিক্রির চেষ্টা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ— রোটি, রুজি আর মকান দাও, মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করো না। তাঁর কথায়, স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে এখানে সবাই মিলেমিশে থাকে। কে থাকবে, আর কে থাকবে না, এটা তুমি ঠিক করার কে!
দু’হাত ভরে মমতার প্রার্থী প্রদীপ সরকারকে সমর্থন দিয়েছে একদা পদ্মফুলের চারণক্ষেত্র খড়্গপুর। নির্বাচনী বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মরিয়া চেষ্টাও শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। এরকম একটা জটিল আবর্তে রেল শহরবাসীকে বাংলা আর হিন্দিতে মমতার সতর্কবার্তা— বাইরে থেকে আমদানি হওয়া লোককে এখানে ডুগডুগি বাজাতে দেবেন না। হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান করতে দেবেন না। মাথায় ফেট্টি বেঁধে যারা এসে বলবে, এটা ভাগ কর, সেটা ভাগ কর, মানুষে মানুষে ভাগ কর, দেশ ভাগ কর, সেই ফেট্টিবাজদের বলবেন, এটা বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতি আর কৃষ্টি নয়। এটা অন্য জায়গা, এটা বাংলা। দীর্ঘ ১৮ বছর পরে রাবণপোড়া ময়দানে সভা করতে আসা মমতাকে সোল্লাসে সায় আমজনতার।