কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
রাজ্যপালের বিধানসভা ভবন সফরকে কেন্দ্র করে এদিন যা হয়েছে, তা এককথায় নজিরবিহীন। বিধানসভা কর্তৃপক্ষের তরফে গোড়ায় সম্মতি দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। এই বিষয়টিকে আমল না দিয়ে এদিন সকালেই তিনি বিধানসভা ভবনে চলে আসায় যাবতীয় বিপত্তির সূত্রপাত। এর জেরে এদিন ভবনের ভিতরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকী, রাজভবনের চিত্রগ্রাহককেও সদনে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পর্যবেক্ষকদের অভিমত, শাসক শিবির তথা সরকারের মনোভাব বোঝার পরও তিনি এই ধরনের কর্মসূচি বহাল রাখছেন নির্দিষ্ট অভিমুখে পৌঁছনোর জন্য।
নির্ধারিত অধিবেশন না থাকায় রাজ্যপাল এদিন সকাল সাড়ে দশটায় বিধানসভা ভবন ঘুরে দেখবেন বলে আগেই রাজভবন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ভবনে যে সব কর্তার স্থায়ী তথা নিয়মিত দপ্তর রয়েছে, সেই অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, উপাধ্যক্ষ সুকুমার হাঁসদা, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তাপস রায়, সরকারি মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, তৃণমূল পরিষদীয় দলের সচিব পার্থ ভৌমিক, উপ মুখ্য সচেতক সমীর চক্রবর্তীর মতো হেভিওয়েটরা কেউই এদিন তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন না। ছিলেন না বিধানসভার সচিব, বিশেষ সচিব সহ কোনও আধিকারিকও। এমনকী, নিরাপত্তা প্রধান তথা মার্শাল বা তাঁর সহকর্মীরা কয়েকজন সদনে হাজির থাকলেও রাজ্যপালের ধারেকাছে তাঁদের দেখা যায়নি। বিধানসভা ভবনে রাজ্যপালের কনভয় ঢোকার জন্য যে গেটটি দীর্ঘকাল ধরে নির্দিষ্ট রয়েছে, এদিন সেটি খোলা ছিল না। গোড়ায় সেখানেই গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষাও করেন ধনকার। গেট না খোলা নিয়ে একপ্রস্ত ক্ষোভ ব্যক্ত করে তিনি ফুটপাত ধরে কিছুটা হেঁটে চালু গেট দিয়ে সদন চত্বরে প্রবেশ করেন। সেখানে বিধানসভার কোনও কর্মীকে তখন দেখা যায়নি। রাজ্যপাল তাঁর এক অফিসার ও নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়েই প্রথমে বিধানসভার গ্রন্থাগার ভবনের সামনে দাঁড়ান। তাঁর অফিসার খোঁজ নিয়ে জানান, গ্রন্থাগারের দরজায় তালা লাগানো। মৃদু হেসে তিনি হাঁটতে হাঁটতে উত্তরপ্রান্ত তথা স্পিকার্স গেট দিয়ে সদনের ভিতরে ঢোকেন। করিডর দিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের চেম্বারগুলির দিকেও উঁকি মারেন। তারপর মুখ্য সচেতকের অফিসে ঢুঁ মারেন। সেখান থেকে বেরিয়ে অধ্যক্ষের ঘরের সামনে থমকে যান দরজা বন্ধ দেখে। পরে লিফট দিয়ে দোতলায় উঠে সচিবের দপ্তরেও যান একবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথাও কাউকে না পেয়ে কার্যত শুনশান ভবন থেকে ফের হেঁটেই বেরিয়ে আসেন ধনকার।
বাইরে বেরিয়েই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিস্ফোরক ভাষণ দেন তিনি। তিনি বলেন, আজ যা করা হল, তাতে আমি অপমানিত। কিন্তু তার থেকেও বেশি অপমান করা হল বাংলার মানুষকে এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে। আমার হৃদয় আজ রক্তাক্ত হল। একজন রাজ্যপালের সঙ্গে অধ্যক্ষ কী করে এমন আচরণ করেন, তা ভেবে আমি স্তম্ভিত। অথচ এই সফরের বিষয়ে বুধবার আমার চিঠি পাওয়ার পর উনি সানন্দে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। বিধানসভার সচিব মোবাইলে আমার বিশেষ সচিবকে প্রথমে সেই বার্তা দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, অধ্যক্ষ আমার স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকী, লাঞ্চ খাওয়ারও নিমন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু ঘণ্টা দেড়েক পরেই সেই সচিব জানান, অধ্যক্ষ সহ তাঁরা অন্যত্র কাজে ব্যস্ত থাকবেন বলে আমায় এদিন আসতে নিষেধ করা হচ্ছে। কিন্তু সচিব সেকথা লিখিতভাবে জানাতে অস্বীকার করায় আমি নির্ধারিত কর্মসূচি বহাল রাখি। এদিন অধিবেশন না থাকলেও বিধানসভায় ছুটি ছিল না। অথচ ভিতরে ঢুকে বুঝলাম, কর্মী-অফিসারদের আসতে সম্ভবত নিষেধ করা হয়েছে। কেউ আমায় স্বাগত জানাননি। কোনও কিছু এগিয়েও দেননি। গণতন্ত্রের মন্দিরে গিয়ে দেখলাম গণতন্ত্রই সেখানে ভুলুণ্ঠিত। কার চিত্রনাট্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হল, তা আমি জানতে চাই। বাংলার মানুষও জানুক সে সব। তবে আমি এসবে দমে যাব না। সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছি বলে এই কাজ আমি চালিয়ে যাব। বুলবুল আক্রান্ত এলাকা সহ বাংলার প্রতিটি কোণায় যাব। চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, এখনও পর্যন্ত আমি একটিও অসাংবিধানিক পদক্ষেপ করেছি বলে কেউ দেখাক।