বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিন সেনেট বৈঠকে রাজ্যপালের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই বৈঠক বাতিল করে। রাজ্যপালকে সেকথা জানানোও হয়। কিন্তু রাজ্যপাল যখন জানাতে যান যে, বৈঠক না হলেও তিনি ক্যাম্পাসে যেতে চান এবং লাইব্রেরি ঘুরতে চান, তখন নাকি তিনি আর ল্যান্ডফোনে আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মোবাইলও নাকি নট রিচেবল ছিল। এমনকী, ইমেলও ‘বাউন্স ব্যাক’ করেছে বলে রাজ্যপালের দাবি। তিনি এও বলেন, আচার্য হিসেবে তিনি ক্যাম্পাসে আসতেই পারেন। এর জন্য কারও অনুমতি নেওয়া বা কাউকে আগাম জানানোর প্রয়োজন নেই। রাজভবন থেকে জানানো হয়েছিল, দুপুর দেড়টা নাগাদ তিনি আসবেন। কিন্তু তাঁর পাইলট কার কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ঢোকে ১টা ৫০ মিনিটের পর। রাজ্যপালের সামনে নিজেদের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরবেন, এই আশায় প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে উপস্থিত ছিলেন কর্মীরা। কিন্তু তাঁরা আর রাজ্যপালের নাগাল পাননি। উপাচার্যের ঘরের বাইরে রিসেপশনে বসে থাকার সময় কেউ তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়েছেন, যেটা তিনি সযত্নে রেখে দেবেন বলে জানান।
সাধারণত, আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের নিজস্ব আসন থাকার কথা। সেটা না থাকলে উপাচার্যের আসনেই তিনি বসতে পারেন। কিন্তু, দরজায় তালা দেওয়া থাকায়, সেই সুযোগও তিনি পাননি। পরে একটি সাধারণ চেয়ারে বসে সাংবাদিক বৈঠক করার সময় যা ইঙ্গিত করেছেন, তাতে আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে তিনি বারবারই বলেছেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াটা চূড়ান্ত ধাপ। ডাক্তার এবং রোগীর উদাহরণ টেনে বলেন, আগে রোগীর কাউন্সেলিং, তারপর রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা করতে হয়। শেষ ধাপ হিসেবে আসে সার্জারি। আগে আমি আগের ধাপগুলি পেরতে চাই। তারপর সার্জারির প্রশ্ন আসছে। এক প্রশ্নের উত্তরে আচার্য বলেন, সমাবর্তন কবে হবে, তা এই বৈঠকেই চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠকই হল না, দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে কী করে। সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন শিক্ষা ব্যবস্থায় রাজনীতিকরণ এবং নীতিপঙ্গুতার অভিযোগও তোলেন তিনি।
ধনকার বলেন, আমাকে অভ্যর্থনা জানাতেই হবে, এমন কোনও মানে নেই। ব্যক্তি হিসেবে আমি নিজেই আসতে পারি। কিন্তু একজন আচার্য বা রাজ্যপাল হিসেবে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাতে বাধ্য। ছুটির দিন না হওয়া সত্ত্বেও কেন কোনও আধিকারিক উপস্থিত নেই, তা আমি জানতে চাইব। উপাচার্যের আরও গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজ থাকতেই পারে। সব না জেনে আমি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছব না। কিন্তু গোটা বিষয়টিকে তিনি যে ভালোভাবে নেননি, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। রাজ্যপালের ঘোষিত কর্মসূচি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি পরিদর্শন। বেরনোর সময় মিনিট দশেক সেখানে সময় কাটান তিনি। লাইব্রেরির প্রশংসা করলেও লাইব্রেরিয়ান বা ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান না থাকায় ফের একবার উষ্মাপ্রকাশ করেন। তারপর ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যান।
এদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ধনকারের যাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, দেশের আর কোনও রাজ্যপাল এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়ান, শুনিনি। রাজ্যপালের এই আচরণ পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ বলেই মনে করেন তিনি। পার্থবাবু বলেন, আচার্য হয়েও তিনি যদি বিনা আমন্ত্রণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়ানোকে নিত্যনৈমিত্যিক করে ফেলেন, তাহলে অতিথি হিসেবে কীভাবে তিনি তাঁর গুরুত্ব বজায় রাখবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, আচার্যকে অসম্মান করার প্রশ্নই নেই। তিনি হঠাৎই এসেছিলেন। আধিকারিকদের অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশেই হয়েছে।
রাজ্যের বিরোধীরা অবশ্য এদিন রাজ্যপালের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। কংগ্রেসের পরিষদীয় নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, রাজ্যপালের পদকে অসম্মান করা হচ্ছে। আচার্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন জেনেও উপাচার্য কীভাবে অনুপস্থিত থাকেন, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, রাজ্যপাল আচার্য হিসেবে সেনেট মিটিংয়ে থাকবে বলায় সব বন্ধ করে তালাচাবি দিয়ে চলে যেতে হল, কীসের ভয়ে? কোনও কিছু গোপন করা হচ্ছে যা প্রকাশ্যে এসে পড়তে পারে, সেই জন্যই কি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আচরণ করল, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।