রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
রক্ত থেকে মারণ সংক্রমণ এড়াতে বহুদিন ধরেই সরকার ‘ন্যাট’ আনার কথা ভাবছিল। কারণ, রাজ্যের প্রথম সারির কর্পোরেট হাসপাতালগুলি তো বটেই, প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশাও সরকারিভাবে ‘ন্যাট’ চালু করে দিয়েছে। সদিচ্ছা থাকলেও বাদ সাধছিল অর্থ। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক পদস্থ সূত্র জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আর্থিক অনুমোদন এসে গিয়েছে। রক্ত সংক্রান্ত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রতি বছর ৫২ কোটি টাকা খরচ করা হবে এই প্রযুক্তিতে।
রবিবার এ প্রসঙ্গে রাজ্য এইডস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সমিতি’র (স্যাকস) এক পদস্থ কর্তা বলেন, তার মানে আমরা অ্যালাইজা পরীক্ষা বন্ধ করে দিচ্ছি না। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত থেকে পাঁচ মারণ অসুখের সংক্রমণ যাতে একেবারেই কমিয়ে আনা যায়, সেজন্য বর্তমানে চালু অ্যালাইজা পরীক্ষার পাশাপাশি ন্যাট প্রযুক্তিও রাখা হচ্ছে। কীভাবে গোটা রাজ্যে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সংগৃহীত রক্ত এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে, সেজন্য একটি ফ্লো চার্টও করা হয়েছে। তিনি জানান, আগামী দু’মাসের মধ্যে এই প্রযুক্তিতে পরীক্ষা চালু হবে রাজ্যে। ধাপে ধাপে দুটি দুটি করে আপাতত সাতটি বড় ব্লাড ব্যাঙ্কে তা চালু হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম-এর রাজ্য সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের স্বেচ্ছায় রক্তদান সংক্রান্ত কমিটি’র সদস্য অপূর্ব ঘোষ বলেন, সরকারকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি প্রযুক্তি যাঁরা বাস্তবায়িত করবেন, সেইসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও সজাগ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে শুধু জলের মতোই টাকা খরচ হবে, কাজের কাজ হবে না। জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের (এনবিটিসি) পরিচালন কমিটি’র সদস্য বিশ্বরূপ বিশ্বাস বলেন, খুবই ভালো খবর। ওড়িশা এর আগে চালু করেছে। কর্ণাটক চালুর চেষ্টা করেছিল। অন্য কোনও রাজ্য চালু করেছে কি না, জানা নেই। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, অত্যন্ত ভালো খবর। ভাইরাস সংক্রমণের উইন্ডো পিরিয়ড কমাতে অ্যালাইজার থেকে অনেক বেশি কার্যকর ন্যাট।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জন্য মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, নদীয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের বড় ব্লাড ব্যাঙ্কে ন্যাটের কিট আসবে। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে তা দেওয়া হবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্ককে। রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে সংগৃহীত সমস্ত সরকারি রক্ত এই ছ’টি ব্লাড ব্যাঙ্কে থাকা ন্যাট কিটের মাধ্যমেই দ্রুত পরীক্ষাও হবে এবং রিপোর্টও অনলাইনে চলে আসবে। তার আগে এখনকার মতো অ্যালাইজা পরীক্ষা যেমন হচ্ছিল, তেমনই হবে।
রক্ত সংবহনবিদ্যার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উইন্ডো পিরিয়ড বা অন্তবর্তীকালীন সময়ে (ভাইরাস সংক্রমণ থেকে তার বহিঃপ্রকাশের মাঝের সময়) রক্তের সংক্রমণ ধরার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দামি এবং প্রায় নিশ্চিত রক্তপরীক্ষার কিট হল এই ন্যাট। এর মাধ্যমে দাতার রক্ত পরীক্ষা করলে রক্তদানের ছয় থেকে নয় দিন আগে দাতার শরীরে সংক্রমণ হলে তা ধরা পড়বে। হেপাটাইটিস বি-এর ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ দিন আগের এবং হেপাটাইটিস সি-এর ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছ’দিন আগের সংক্রমণ ধরে ফেলবে ন্যাট। যেখানে এই তিন ভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যালাইজার উইন্ডো পিরিয়ড হল যথাক্রমে কমবেশি তিন সপ্তাহ, ৫০ দিন এবং এক মাস। অর্থাৎ অ্যালাইজা রক্তে পুরনো সংক্রমণ ধরতে পারলেও, তুলনামূলকভাবে নতুন, কয়েকদিন আগেকার সংক্রমণ ধরতে পারে না, যেটা ন্যাট পারে।