নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নারী শক্তির সশক্তিকরণের পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। নারী-পুরুষের সমানাধিকারের সমর্থনে সুর চড়াতে গিয়ে আইনসভায় (সংসদ-বিধানসভা) উভয়পক্ষের ৫০ শতাংশ করে প্রতিনিধিত্বের দাবি জানালেন তিনি। রাজ্যপালের কথায়, প্রশাসন এবং সরকার পরিচালনায় বেশি সংখ্যক মহিলা অংশগ্রহণ করলে সমাজ সার্বিকভাবে লাভবান হবে। এ প্রসঙ্গে নারী শক্তির সার্বিক উন্মেষে জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদানের কথা স্মরণ করেন ধনকার। কলকাতায় একসময়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে গঠিত নারী সেবা সঙ্ঘের ৭৫ তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে বুধবার যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই সংস্থাটি সমাজের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের আত্মনির্ভর করে তুলতে কাজ করছে। এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাজ্যপাল বলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রথম নেহরু মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের উপাচার্যের পদও সামলেছেন তিনি। ক্ষমতা-পদ ছেড়ে তিনি কাশ্মীরি মহিলাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে জীবন দিয়েছিলেন। রাজ্যপাল বলেন, তাঁর হাতে তৈরি একটি রাজনৈতিক দল বর্তমানে দেশ শাসন করছে। শ্যামাপ্রসাদ অনুভব করেছিলেন, সংবিধানের ৩৭০ ধারা কাশ্মীরি মহিলাদের সমানাধিকারের পরিপন্থী। কারণ, কাশ্মীরের মহিলারা অন্য প্রদেশের পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতেন। এ বছরই ৩৭০ ধারা বিলোপ হওয়ায় প্রাক্তন আইনজীবী এবং রাজ্যপাল হিসেবে তিনি যারপরনাই খুশি বলেও জানিয়েছেন।
সম্প্রতি তাঁর সিঙ্গুর সফর নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কে এদিন নিজেই জল ঢেলে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারকে জানিয়েই তিনি সিঙ্গুরে গিয়েছিলেন। বিশ্বভারতী সফরের মতো সিঙ্গুর যাত্রার বিষয়টিও রাজভবনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল। তিনি আচমকা বাতিল হওয়া ন্যানো কারখানার প্রকল্প এলাকায় যাননি। বিষয়টি নিয়ে অযথা রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ করে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে সাংবাদমাধ্যমের একাংশের ভূমিকারও সমালোচনা করেন রাজ্যপাল। নারী সেবা সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে হাজির দর্শকদের উদ্দেশে রাজ্যপালের অকপট স্বীকারোক্তি, আপনারা যদি মনে করেন আমি কিছু ভুল বলছি, খোলা মনে আমায় বলুন। আমি নিজেকে সংশোধন করব। নারী সেবা সঙ্ঘের মতো সংগঠনগুলির কাজে দেশের শিল্প সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসার আবেদনও জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়, আমার কষ্ট হয়, যখন দেখি মহিলাদের নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনগুলির পাশে শিল্প সংস্থাগুলি দাঁড়ায় না। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে শিল্প সংস্থাগুলিকে এই ধরনের সংগঠনগুলির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন রাজ্যপাল।