নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) ভয়াবহতা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে দলের সর্বস্তরকে নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে অসমে এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া ১২ লক্ষ হিন্দুর প্রসঙ্গটি জনতার দরবারে নিয়ে যাওয়ার জন্য দলের সাংসদ ও বিধায়কদের নিদান দিয়েছেন তিনি। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এনআরসি’কেই যে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে আক্রমণের অন্যতম হাতিয়ার করতে চাইছে জোড়াফুল শিবির, তা স্পষ্ট হয়েছে তাদের ‘ভোটগুরু’ প্রশান্ত কিশোরের (পি কে) কথাতেও। এদিন দুপুরে তৃণমূল ভবনে দলের তফসিলি জাতিভুক্ত বিধায়ক ও সাংসদদের সঙ্গে প্রথম দফার বৈঠকে মমতার সঙ্গেই পি কে এনআরসি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এনআরসি হলে এ রাজ্যে তার সুদূরপ্রসারী কী কী প্রভাব পড়বে, তা মানুষের দোরে দোরে ঘুরে বোঝাতে হবে। জানতে হবে রাজ্যের তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষ ঠিক কী চাইছেন। মানুষের সেই চাহিদার কথা তাঁর সংস্থা ‘আইপ্যাক’ টিমের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন পি কে। লোকসভায় কেন ফল খারাপ হয়েছে, তাঁদের কী মনে হচ্ছে, তা বিধায়কদের কাছ থেকে জানতে চান পি কে। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, ধর্ম-জাতির ভিত্তিতে ভাগাভাগির বিরুদ্ধে আমরা। তাই এনআরসি’র ভয়াবহতা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, যারা ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিক, তাদের কেন আবার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে? এই বিষয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেই আন্দোলন করতে বলা হয়েছে।
এত উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও, লোকসভায় খারাপ ফলের জন্য দলের একটা অংশের জনবিচ্ছিন্নতাই যে দায়ী, দলীয় বৈঠকে সে প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলার উপর জোর দেন তিনি। বিশেষ করে তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেন দলনেত্রী। অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষের কাজকে আরও ত্বরান্বিত করতে এই মুহূর্তে দপ্তরহীন এক মন্ত্রীকে যে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, সেই ইঙ্গিতও মিলেছে বৈঠকে।
দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক পর্বে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির গত সাড়ে তিন মাসের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আলোচনা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই কর্মসূচি পালনে দলের সর্বস্তর ঝাঁপিয়ে পড়লেও, কাজে ঢিলেমির জন্য কয়েকজনের নাম ধরে দুষেছেন তিনি। এই তালিকায় যেমন হাওড়ার দুই বিধায়ক রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের দুই মন্ত্রীও। তাঁদের মধ্যে এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সঙ্গে নিজের ‘গরিমা’ প্রচারের নমুনাও নজরে এসেছে পি কে’র সংস্থা আইপ্যাক-এর সমীক্ষক দলের কাছে। উত্তরবঙ্গের এক মন্ত্রীকে সংবাদমাধ্যমে ঘন ঘন বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, নদীয়ার সঙ্গেই এবার থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের দলীয় পর্যবেক্ষক হবেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের কাজে শুভেন্দু অধিকারীর ব্যস্ততা ক্রমেই বাড়ছে। এরকম একটা অবস্থায় তাঁর ভার কিছুটা লাঘব করতে বাঁকুড়ায় অতিরিক্ত পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, উৎসব পর্ব নির্বিঘ্নে মেটায় রাজ্যের সব মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এরপর আগামী ১০ তারিখ নবি দিবস এবং ১২ তারিখ গুরু নানকের ৫৫০ তম জন্মদিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হবে। ১১ তারিখ সন্ধ্যায় ময়দানে শিখ সম্প্রদায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। ১২ তারিখ যাবেন শিলিগুড়িতে। সেখানে গুরুদোয়ারায় গুরু নানকের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তিনি। ১৩ তারিখ কোচবিহারের রাসমেলার অনুষ্ঠানেও যে তিনি অংশ নেবেন, তাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ১৪ তারিখ কোচবিহারে এক দলীয় সভায় অংশ নিয়ে পরের দিন কলকাতায় ফিরবেন। এরপর আগামী ১৮ নভেম্বর থেকে তিনদিনের সফরে মুখ্যমন্ত্রী যাবেন মালদহ ও মুর্শিদাবাদে।