পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বৃহস্পতিবার বৈঠকের প্রথম দিনেই সূর্যবাবুরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর চারজন ‘অসুস্থ ও বৃদ্ধ’ সদস্যকে বাদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির তরফে বলা হয়েছে, ওই চারজন স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। নেতৃত্ব তাঁদের সেই ইচ্ছা মেনে নিয়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের পরিবর্তে কয়েকজন অপেক্ষাকৃত বয়সে কম নেতাদের সেই পদে আনা হয়েছে। সংগঠন নিয়ে বেশ কিছু কাল ধরেই নানা ধরনের নিদান দিয়ে যাচ্ছিলেন সূর্যবাবুরা। দলের গুরুত্ব ফেরানোর জন্য নিচুতলায় সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা দূর করা যে সবচেয়ে বেশি জরুরি, সেটা বারবার বলেছেন তাঁরা। এমনকী, এই লক্ষ্যপূরণে সাংগঠনিক প্লেনামে গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও দলীয় নির্দেশে উল্লেখ করেছেন রাজ্য সম্পাদক একাধিকবার। কিন্তু জেলাস্তরে অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবে তা ঘটেনি বলে এবার হেস্তনেস্ত পদক্ষেপের পথেই তাঁরা হাঁটতে চেয়েছেন। আর তা করতে গিয়েই প্রথমে উচ্চ নেতৃত্ব থেকে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন সূর্যবাবুরা। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা অন্তত তেমনই।
সূর্যবাবু এদিন বৈঠকের শেষে জবাবি ভাষণে বলেন, রাজ্যস্তরে যে রদবদল করা হল, সেটা শুরু মাত্র। এই প্রক্রিয়া এখন চলবে। এই পদ্ধতিতে জেলা, এরিয়া, লোকাল, ব্রাঞ্চ— সব স্তরের কমিটি থেকেই নিষ্ক্রিয় ও অসুস্থ নেতা-কর্মীদের বাদ দিতে হবে। সংগঠন মজবুত করা নিয়ে এর আগে অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু বুথ কমিটি গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদক্ষেপ করতেও বেশ কিছু জেলায় অনীহা লক্ষ করা গিয়েছে। মাসের পর মাস লেভি আদায়ের হিসেব পেতেও হন্যে হতে হচ্ছে অনেক জায়গায়। তাই আর নিষ্ক্রিয়তা বা শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না। নিচুতলায় এ কাজ সঠিকভাবে না করা হলে দরকারে এবার রাজ্য থেকে তাতে হস্তক্ষেপ করা হবে। আগামী সম্মেলনের সময় করা হবে— এই যুক্তিতে এ কাজ আর ফেলে রাখা যাবে না।
সিপিএম সূত্রের খবর, ঝাড়াই-বাছাইয়ের জেরে এবার তরুণ প্রজন্মকেই মূলত রাজ্য নেতৃত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু নতুনদের নাম চূড়ান্ত করার পথও পুরোপুরি মসৃণ ছিল না। দু’-একজনের নাম নিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীতেই আপত্তি উঠেছিল একাংশের তরফে। আবার ছেঁটে ফেলার ক্ষেত্রেও বয়স্কদের কেউ কেউ সহজে অব্যাহতি পেতে রাজি হননি। নতুন মুখ আনার ক্ষেত্রে মতপার্থক্যের কারণে এখনও সম্পাদকমণ্ডলীতে একটি আমন্ত্রিত সদস্যের পদ শূন্য থেকে গিয়েছে। তবে দীর্ঘকাল বাদে দলের অন্যতম গণসংগঠন কৃষকসভার তরফে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে কেন কোনও প্রতিনিধি থাকলেন না, সে প্রশ্ন উঠেছে পার্টির ভিতরেই। রাজ্য কমিটির বৈঠকেও কয়েকজন কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়ার দাবি জানান। একইভাবে পশ্চিম বর্ধমান থেকে পার্থ মুখোপাধ্যায়ের মতো তরুণ নেতাকে রাজ্য কমিটিতে নিয়ে আসার পক্ষেও সওয়াল করেন কেউ কেউ। কলকাতার নেতা তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাও ওঠে ঘুরেফিরে। যদিও এসব দাবিকে সূর্যবাবুরা আমল দিতে চাননি শেষ পর্যন্ত। যেমন গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষে প্রদেশ কংগ্রেস দপ্তরের প্রদর্শনী দেখতে যাওয়া নিয়ে বৈঠকে ওঠা প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু বলেন, গান্ধীজি বা কংগ্রেসের সঙ্গে আদর্শগত মতপার্থক্য দলের আগেও ছিল, এখনও থাকবে। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে গান্ধীজির অবদানের কথা অস্বীকার করা যায় না বলেই আমরা সেদিন ওই পদক্ষেপ করেছি। দেশ ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে এখন থেকে যে মাঝে-মধ্যে যৌথ আন্দোলনের কর্মসূচি বা তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সমঝোতার পথে সিপিএম চলবে, সেটা এদিন পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।