বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বামেরা খাতাই খুলতে পারেনি। অন্যদিকে, অভূতপূর্ব উত্থান হয়েছে বিজেপির। কী আসনের নিরিখে, কী প্রাপ্ত ভোটের অঙ্কে। বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের উল্টোদিকে বামেদের অস্তিত্বের সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে। ত্রিপুরাতেও ধরাশায়ী বামেরা। ত্রিপুরায় ক্ষমতার হাতবদল হতেই বিজেপির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম সহ বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর লেখায় দাবি করেছেন, ‘ত্রিপুরায় গণতন্ত্র কাঁদছে। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি বিস্মিত সিপিএমের বন্ধুদের দেখে। তাঁরা ত্রিপুরা নিয়ে নীরব। রাজ্যটা বিজেপির হাতে তুলে দিয়ে চুপ করে বসে আছে। কোনও আন্দোলন নেই। কোনও প্রতিবাদ নেই। যত রাগ আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকারের উপর। যাদের ত্রিপুরা অভিযান করার কথা, তারা করছে নবান্ন অভিযান। লোকসভা ভোটে নিজেদের ভোট ট্রান্সফার করে দিল বিজেপিকে। হার্মাদরা হয়ে গেল বিজেপির সম্পদ।’ ত্রিপুরা এখন সমাজবিরোধীদের হাতে চলে গিয়েছে বলে মনে করেন মমতা। ক্ষমতা এখন ‘গেরুয়া গুন্ডাদের’ হাতে।
বিজেপি বিরোধিতার পাশাপাশি বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ের ডাক দিয়ে লোকসভা ভোটে লড়েছিল বামফ্রন্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, এতে ভোটে মেরুকরণের কাজ সহজ হয়ে গিয়েছিল। যার ফায়দা তুলেছে বিজেপি। মমতার ব্যাখ্যা, বাংলায় বিজেপির আছেটা কী? সিপিএমের উদ্দেশে তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘মুখে বড় বড় কথা আমরা বামপন্থী। যদি সত্যি তাই হতেন, তাহলে ত্রিপুরা নিয়ে পথে নামতেন। দিল্লিতে প্রতিবাদ করতেন। আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে নাটক করতেন না।’ মমতার বিশ্বাস, ত্রিপুরার মানুষ বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে বাংলার মতো তৃণমূলকেই ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিল। কিন্তু যাদের হাতে সেখানকার সাংগঠনিক দায়িত্ব তিনি দিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসঘাতকতা করে পদ্ম শিবিরে নাম লিখিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী স্বীকার করেছেন, বাংলার লড়াই নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ত্রিপুরায় দলের জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজে নজর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই বাম শাসনে অতিষ্ঠ ত্রিপুরাবাসীকে বিজেপি গ্রাস করতে পেরেছে বলে মনে করেন মমতা। ত্রিপুরার গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের ৮৬ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি বলে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মমতা। বাকি ১৪ শতাংশ আসনেও সুযোগ বুঝে লুট হল গণতন্ত্র। অথচ সিপিএম চুপ করে রয়েছে। তাঁর ইঙ্গিত, এটাও পরোক্ষে বিজেপির প্রতি নমনীয়তার লক্ষণ।
মমতা বলেন, বিজেপি ত্রিপুরা দখল করার পর সেখানে যা চলছে, তাতে শিউড়ে উঠতে হয়। এই অবস্থার জন্য নাম না করে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে তাঁর বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্যের জন্য কটাক্ষ করেছেন মমতা। যদিও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিতে ব্যক্তি আক্রমণে তাঁর বিশ্বাস নেই। মমতা লিখেছেন, কাদের হাতে দেশের এই অন্যতম ক্ষুদ্র রাজ্যের ক্ষমতা, তা তাদের কথাবার্তাতেই স্পষ্ট। ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি নোবেল পুরস্কার ত্যাগ করেছিলেন। গৌতম বুদ্ধ নাকি পায়ে হেঁটে জাপানে গিয়েছিলেন। মহাভারতের যুগে নাকি ইন্টারনেট ছিল। সিভিল সার্ভিসে আসা উচিত ছিল শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের। সরকারি চাকরি বাড়লে জিডিপি বাড়ে। মমতার দাবি, ত্রিপুরার আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা শোচনীয়। মাত্র সতেরা মাসে তিনজন মুখ্যসচিবকে সরানো হয়েছে। ডিজিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। কথা না শুনলে হয় বরখাস্ত, নয়তো বদলি করা হচ্ছে। এক আইএএস অফিসার ইস্তফা দিয়েছেন। মমতার মতে, বিজেপির অপশাসনের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ত্রিপুরায় তো বটেই, কিছু মানুষ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন এরাজ্যেও। এই প্রসঙ্গ তুলে মমতার ইঙ্গিতপূর্ণ হুঁশিয়ারি, ‘লোভ দেখানো হয়েছিল তাদের। এখন বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের আর কোনও গুরুত্ব নেই। পুরোটাই আরএসএসের দখলে। বিজেপির সঙ্গে গেলে কী হয়, তার উদাহরণ ত্রিপুরা।’