বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এনিয়ে কী মত বিশিষ্টদের? প্রবীণ সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, একটা সময় ছিল, যখন বিজয় দশমীর পর বাড়ির ডাকবাক্সে এই ধরনের অসংখ্য চিঠি দিয়ে যেতেন পোস্টম্যান। সেই চিঠি পড়ার জন্য বাড়িতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। বাবা বাড়ির কাছে ডাকঘর থেকে একগুচ্ছ পোস্ট কার্ড কিনে এনে তাতে আমাদের দিয়ে ‘দুর্গা সহায়’ ছাড়াও একই গদের কিছু কথা লিখে স্থানীয় ডাকঘরের সামনে এক পেল্লাই লাল ডাকবাক্সে ফেলে আসতে বলতেন। এখন বাড়ির লেটার বক্সে বিভিন্ন ম্যাগাজিন এসে ভিড় করলেও বিজয়ার সেই চিঠি ধূসর স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। তবে ওই চিঠিকে ঘিরে রয়েছে একটা নস্টালজিয়া। কারণ ওই চিঠির মধ্যেই লুকিয়ে থাকত নানা সুখস্মৃতি। প্রাক্তন বিচারক ডঃ নীরদরঞ্জন ঘোষের কথায়, আমাদের ছোটবেলায় বিজয়ার পর বাড়ির সামনে দিয়ে পোস্টম্যান গেলেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করতাম, আমাদের কোনও চিঠি আছে কি না। কোনও সময় সেই পোস্টম্যান পোস্টকার্ড কিংবা ইনল্যান্ড লেটার হাতে গুঁজে দিয়ে বলতেন, এই নাও তোমাদের চিঠি। দৌড়ে এসে সেই চিঠি বাড়ির বড়দের হাতে তুলে দিতাম। দেখতাম, পোস্ট কার্ডের মাথায় লাল কালির আঁচড়ে লেখা থাকত ‘শ্রীশ্রী দুর্গা সহায়’। বাবা-মা বলতেন, এটা বিজয়ার চিঠি। অমুক আত্মীয় পাঠিয়েছেন। সেই যুগ আর নেই। আজ আর বাড়িতে বিজয়ার চিঠি আসে না।
স্বামী বিবেকানন্দের পদধূলিধন্য আলমবাজার মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সারদাত্মানন্দ বললেন, আগে ফি বছর মঠের অফিস ঘরে বিজয়া দশমীর পর পিওন এসে গোছা গোছা চিঠি দিয়ে যেতেন। সবই বিজয়ার শুভেচ্ছা বার্তা। এখন তেমন চিঠি আসে, তবে তা হাতেগোনা। এখন বিজয়ার পর অধিকাংশ ভক্তই ই-মেল অথবা হোয়াটসঅ্যাপে বিজয়ার শুভেচ্ছা বার্তা জানান। মহারাজের কথায়, ওই চিঠি আজ লুপ্ত হতে বসেছে। ইতিহাসের প্রাক্তন শিক্ষক দীপক দাশগুপ্ত অবশ্য বললেন, কালের নিয়মে অনেক কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। আধুনিক যুগে বিজ্ঞানকে আমরা কী করে অস্বীকার করি। তবে বিজয়ার ওই সব চিঠিতে যে স্নেহের পরশ লুকিয়ে থাকত, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রবীণ যাত্রাশিল্পী রুমা দাশগুপ্তের মতে, বাড়িতে খুঁজলে বিজয়ার শুভেচ্ছামাখা তেমন চিঠি হয়তো দু’-একটা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই যুগে সেসব অতীত। হাতে লেখা শুভেচ্ছা বার্তার দেখা মেলে না আর। সুখ দুঃখ, স্নেহ ভালোবাসা কেমন যেন সব চলে গিয়েছে স্মার্ট ফোনের দখলে।