নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র কর্মসূচি ঘিরে বৃহস্পতিবার বেনজির বিক্ষোভে উত্তাল হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। পড়ুয়াদের বিক্ষোভের জেরে তাঁকে ক্যাম্পাসেই দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকতে হয়। অভিযোগ, শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয় বাবুলকে। বিক্ষোভকারীদের পাল্টা অভিযোগ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেহরক্ষীরা পড়ুয়াদের মারধর করেছেন। ছাড় পাননি ছাত্রীরাও। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তাঁকে এবং সহ উপাচার্য প্রদীপ ঘোষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ টানাপোড়নের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধারে যাদবপুরে চলে আসেন স্বয়ং আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার। পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকেও। বাবুলকে নিয়ে বেরতে গেলে ছাত্রাছাত্রীরা গেটের মুখে বসে পড়েন। ফলে আটকে পড়েন রাজ্যপাল ও তাঁর কনভয়। বাবুল যতক্ষণ না ক্ষমা চাইবেন, ততক্ষণ গাড়ি আটকে রাখা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পর অবশেষে পুলিসি হস্তক্ষেপে রাত ৮টা নাগাদ তিন নম্বর গেট দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করা হয় রাজ্যপালকে। ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিয়ন রুম ও সংলগ্ন এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেছে এবিভিপির বহিরাগত কর্মী-সমর্থকরা। এবিভিপি এবং দুর্গাবাহিনীর সমর্থকরা চার নম্বর গেটের কাছে থাকা আর্টস ফ্যাকাল্টির ইউনিয়ন রুমে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সেখানে থাকা আসবাবপত্র, কম্পিউটার, লাইট, ফ্যান ভেঙে গোটা দেওয়ালে এবিভিপি লিখে দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে যথেচ্ছ ভাঙচুরের পর রাস্তায় বেরিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। থমকে যায় গোটা এলাকা।
ঘটনার সূত্রপাত এদিন যাদবপুরের এবিভিপি শাখার তরফে আয়োজিত একটি আলোচনাচক্রকে কেন্দ্র করে। তাতে আমন্ত্রিত ছিলেন বাবুল। অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই জমায়েত করে গো ব্যাক এবিভিপি, গো ব্যাক বাবুল স্লোগান শুরু করেন পড়ুয়ারা। বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ কে পি বসু হলের দিকে এগতে থাকলে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ঘিরে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। বাবুলকে কেউ চড় মারেন, কেউ চুল ধরে টানেন। উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই লাঠি দিয়ে বাবুলের মাথায় মারা হয় বলে অভিযোগ। পরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরনোর সময় ফের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বাবুল। ধাক্কাধাক্কিতে চশমা হারান তিনি।
এদিকে, রাজ্যপালের ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধারে গিয়েছিলেন তিনি। যাদবপুর আসার পথে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে সেই মুহূর্তে তাঁকে সেখানে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, কিছুটা সময় দিন, আমরা সামলে নেব।
রাজ্যপাল অবশ্য তার আগে থেকেই ক্ষিপ্ত ছিলেন। আগেই তিনি প্রেস বিবৃতিতে বলেছিলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে, তা তা এই ঘটনার প্রতিফলন। এই বিষয় নিয়েও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পার্থবাবু। বলেছেন, এখানে আইনশৃঙ্খলার কোনও প্রসঙ্গই নেই। আমরা তাঁর এই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করছি। এটা বিজেপি ও বাম ছাত্র সংগঠনের লড়াই। তবে তিনি এবিভিপির তাণ্ডব নিয়ে কেন একটি কথাও বললেন না, তা আমাদের অবাক করছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অবশ্য এদিনের ঘটনার জন্য উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকেই দায়ী করেছেন। বাবুলের অভিযোগ, প্রথম থেকে কড়া ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটত না। মন্ত্রীর এই অভিযোগের কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করেছেন উপাচার্য।