শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
বিজ্ঞাপন এজেন্সির মাধ্যমে বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন আসে। এজেন্সিগুলি পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় রিপোর্ট পাঠায়। তার ভিত্তিতে সংস্থা সবুজ সঙ্কেত দিলে বিজ্ঞাপন চূড়ান্ত হয়। যে সব পুজো মণ্ডপে সাধারণত দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি হয়, সেখানে বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহী হয় সংস্থাগুলি। সেইসব বিজ্ঞাপনের রেটও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। কিন্তু এবার সেই সব পুজোতেও কর্পোরেট ফান্ডিংয়ে ভাটার টান।
মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের (লেবুতলা পার্ক) পুজো ‘মেগা বাজেটের’ উৎসব হিসেবে চিহ্নিত। কলকাতার আর কোনও পুজো কমিটি এত বেশি টাকা খরচ করে না। থিমের পুজো বলতে যা বোঝায়, তা না হলেও অভিনবত্বের জন্য পুজোর দিনগুলিতে জনস্রোত আছড়ে পড়ে এখানে। পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা সজল ঘোষ জানালেন, আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার বাজেট হবে তাঁদের। গতবারের থেকে বাজেট কিছুটা বেড়েছে। গতবার ছিল রুপোর রথের আদলে মণ্ডপ। এবার থাকছে সোনার প্রতিমা। প্রতিমার খরচ অবশ্য বাজেটের মধ্যে নেই। কারণ স্পনসর দেবে প্রতিমার দাম। পুজো শেষে সোনার প্রতিমা নিয়ে যাবে তারা। কিন্তু মায়াপুরে ইস্কনের নির্মীয়মাণ মন্দিরের আদলে ও তার অন্দরে ‘শিসমহল’ তৈরির খরচ তো আছে। সজলবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের আয়ের ৮০ শতাংশই আসে কর্পোরেট সংস্থার বিজ্ঞাপন থেকে। পুজো প্রাঙ্গণের মেলা থেকেও টাকা আসে। এবার কর্পোরেট ফান্ডিং কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও সজলবাবু এব্যাপারে আশাবাদী। তাঁর দাবি, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর আকর্ষণেই বিজ্ঞাপন আসবে।
পুজোর দিনগুলিতে জনজোয়ার আছড়ে পড়ে মধ্য কলকাতার আরও একটি পুরনো পুজো কলেজ স্কোয়ারে। গতবার প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। এবার খরচ কিছুটা বাড়ছে। এবার তা এক কোটি ছুঁতে পারে বলে জানিয়েছেন পুজো কমিটির সম্পাদক বিকাশ মজুমদার। এই পুজো প্রাঙ্গণের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এর আলোকসজ্জা। খরচের একটা বড় অংশ যায় পুজো প্রাঙ্গণকে আলোর মালায় সাজাতে। কিন্তু এবার টাকা জোগাড় নিয়ে বেশ চিন্তায় বিকাশবাবুরা। আর বাকি মাত্র ক’দিন, বিজ্ঞাপন এজেন্সির প্রতিনিধিরা শুধু খোঁজখবরই নিয়ে যাচ্ছেন। চূড়ান্ত কিছু হচ্ছে না। বিশ্বকর্মা পুজো মিটলে বিজ্ঞাপনের বিষয়গুলি চূড়ান্ত হতে শুরু করবে, আশায় তাঁরা।
উত্তর কলকাতার আরেক ঐতিহ্যশালী পুজো বাগবাজার সার্বজনীন। কোনও থিম নয়। ঐতিহ্য আঁকড়ে বছরের পর বছর ধরে পুজো হচ্ছে এখানে। এখানে পুজোর খরচ নিয়ে বেশ চিন্তায় কমিটির কর্তা গৌতম নিয়োগী। তিনি জানিয়েছেন, এখনও তো বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যাপারে কেউ বিশেষ যোগাযোগ করছেন না। গতবার এমন অবস্থা ছিল না। পুজোর খরচের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে কর্পোরেট ফান্ডিং থেকে। গতবার শতবর্ষ ছিল, তাই খরচ কিছুটা বেড়েছিল। প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। এবার তা কমাতেই হবে। তা হলেও ৭৫-৮০ লক্ষ টাকা তো খরচ হবেই।
দক্ষিণ কলকাতার নাকতলা সর্বজনীন কলকাতার সেরা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। শহরের এক প্রান্তে হলেও নাকতলার থিমের পুজো দেখতে লাইন পড়ে লম্বা। এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পুজো কমিটির কর্তা তথা তৃণমূলের কাউন্সিলার বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানালেন, কর্পোরেট সংস্থাগুলি থেকে বিজ্ঞাপন খাতে যে আয় হয়, তার হাল এবার বেশ খারাপ। খরচের ৬০-৬৫ শতাংশ ভাগ সেখান থেকেই আসে। এই পরিস্থিতিতে খরচ কাটছাঁট করার চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা। গত বছর ৭৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির পুজো কমিটির বাজেট প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। উত্তর কলকাতার টালা বারোয়ারি বাজেটও ৩০ লক্ষের আশপাশে। দুই পুজো কমিটির কর্তা যথাক্রমে পার্থ ঘোষ এবং পি এল বসু জানালেন, বিজ্ঞাপনের যা হাল, তাতে বাজেট বাড়ানোর কথা ভাবতেই পারছেন না তাঁরা। উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনের পুজোর বাজেট ২৫-৩০ লক্ষ টাকার আশপাশে থাকে। তাদের অন্যতম কর্তা সোমেন দত্ত বলেন, এবার টাকার জোগান নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। খরচের ৭০-৭৫ শতাংশই আসে কর্পোরেট সেক্টর থেকে। এবার কী হবে, তা নিয়ে কপালের ভাঁজ দীর্ঘ হচ্ছে তাঁদের।
বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের পুজোর সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও নেতারা। শ্রীভূমির পুজো দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর। একডালিয়া এভারগ্রিনের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে যুক্ত পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যুব কল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস যুক্ত নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘের সঙ্গে আর পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম চেতলা অগ্রণীর পুজোর কর্মকর্তা। এই পুজোগুলির আয়ের উৎসও কর্পোরেট জগৎ। সব পুজোতেই এবার কর্পোরেট ফান্ডিংয়ে ভাটার টান।