বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ভাতারের নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙাপাড়া গ্রামে এই আসাদুল্লা শেখ-এর বাড়ি। এলাকার অনেকে তাকে রাজু বলে ডাকত। ছয় ভাইয়ের মধ্যে সে পঞ্চম। আসাদুল্লার শ্বশুরবাড়ি মঙ্গলকোটের কুলসুনো গ্রামে। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সুবাদে কুলসুনো গ্রামের শিমুলিয়া মাদ্রাসায় সে জেহাদি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। তারপর একাধিক জায়গা থেকে জেএমবি জঙ্গি নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড় কাণ্ডের পরই এলাকা ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যায়। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সে দক্ষিণ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণেও যুক্ত রয়েছে এই আসাদুল্লা। চেন্নাইয়ে স্লিপার সেল তৈরির কাজ করছিল। আসাদুল্লা বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে মঙ্গলকোটের কুলসুনো গ্রামে বাপের বাড়িতে চলে যান। ভাতারের ডাঙাপাড়া গ্রামের বাড়ি তালাবন্ধ হয়েই পড়ে রয়েছে। এনআইএ খাগড়াখড় কাণ্ডের তদন্তভার নেওয়ার পর তার এক দাদাকে একাধিকবার তলব করেছিল।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর মহাঅষ্টমীর দিন বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে তীব্র বিস্ফোরণ হয়েছিল। ওই বিস্ফোরণে দু’জনের মৃত্যুও হয়। প্রথমে জেলা পুলিস তদন্ত শুরু করে। তারপর সিআইডি এবং পরে এনআইএ এই কাণ্ডের তদন্তভার নেয়। তদন্তে উঠে আসে জেএমবি জঙ্গিদের কার্যকলাপের ঘটনা। ওই ঘটনাস্থল থেকে আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), আরডিএক্স সহ নানা জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছিল। ওই কাণ্ডে মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত ৩০ আগস্ট ১৯ জনের সাজা ঘোষণা করেছে এনআইএ’র নগর ও দায়েরা আদালত। তবে, এই কাণ্ডের মূল মাথা যারা ছিল সেই ‘জামাত উল মুজাহিদিন’-এর জঙ্গিনেতা নেতা কওসর ওরফে বোমা মিজান, ইউসুফ শেখ, কদর শেখ, ডালিম শেখ সহ ১২ জনের বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
মঙ্গলবার আসাদুল্লা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভাতারে তার গ্রামে থমথমে পরিবেশ। জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়ার আশাপাশের লোকজন অবশ্য ওই তালাবন্ধ বাড়ির দিকে ছায়া মাড়াননি। পাঁচ বছর কেউ বাড়ি ব্যবহার না করায় বাড়ির উঠোন আগাছায় ঢেকে গিয়েছে। পুলিস ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে তার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি দুই রয়েছে। তাই গত পাঁচ বছরে এই জেলার সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকবেই। সে টানা পাঁচ বছর বেপাত্তা ছিল নাকি গোপনে কোনও সময় এসেছিল সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। এসে থাকলে কী কারণে এসেছিল এবং কার কাছে এসেছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে যার যার সঙ্গে দেখা করতে পারে, সেই সন্দেহভাজনদের উপর নজরদারি চলছে। তাদের মোবাইলের কললিস্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুধুমাত্র ভাতার, পূর্ব বর্ধমান জেলা, রাজ্য এবং এই দেশ নয়, গত পাঁচ বছরে সে বাংলাদেশের কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, জেএমবি’র বাংলাদেশ ইউনিটের প্রধান সালাউদ্দিনেরও ডানহাত ছিল এই আসাদুল্লা। তাই বাংলাদেশে তার যোগাযোগের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এই পাঁচ বছরের মধ্যে কোনও সময় সে গোপনে সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে বাংলাদেশেও গিয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।