বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
ঘটনা এক। রাজারহাটের দশদ্রোণের ঘটনা। আঞ্জিরা বিবি নামে এই ঘটনায় বর্তমানে বিচারাধীন বন্দি ওই গৃহবধূ তার প্রেমিককে নিয়ে যেভাবে স্বামীকে খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ, তা জানলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। স্বামীকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে হাত পা বেঁধে ফেলেছিল আঞ্জিরা। লক্ষ্য ছিল, ইলেকট্রিক শক নিয়ে মারার। ইলেকট্রিক শক দিতেই স্বামীর শরীরটা থরথর করে কেঁপে ওঠে। আনকোরা অপরাধীরা এইসব ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সময় নেয় না। আঞ্জিরা তা তো করেইনি, উল্টে ঠান্ডা মাথার নৃশংস অপরাধীর মতো লাঠি দিয়ে স্বামীর অন্ডকোষে মারতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, এক সময় স্বামীর গলা টিপে মারার চেষ্টা করে যায় সে।
ঘটনা ২। নিউটাউনের বহু চর্চিত আইনজীবী খুন। খুনে অভিযুক্ত বিচারাধীন বন্দি তারই স্ত্রী মহিলা আইনজীবী অনিন্দিতা দে’র আচরণ দেখে প্রথমে পুলিস পর্যন্ত ধোঁকা খেয়ে গিয়েছিল। অকুস্থলে গিয়ে আইনজীবীর মৃতদেহ দেখে পোড়খাওয়া অফিসাররা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ কী, তা অনুমান করতে পারেননি। শেষে ময়নাতদন্তে বোঝা যায়, গলায় মোবাইল চার্জারের তার পেঁচিয়ে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছিল রজত দে নামে ওই আইনজীবীকে।
ঘটনা ৩। গ্যাংস্টার রামুয়া খুন। আইনজীবী খুনের ঘটনার মতোই এক্ষেত্রে খুনি কে, কেন খুন তা নিয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছিল পুলিস। প্রথমদিকে এই তত্ত্বই খাঁড়া করা হয়েছিল যে, কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং বোধহয় খুন করে চলে গিয়েছে ওই ভয়ঙ্কর অপরাধীকে। রামুয়ার স্ত্রীর বয়ান আরও গোলমাল করে দেয় পরিস্থিতি। শেষমেশ তার শরীরে একটিমাত্র গুলির আঘাত, ফোনের কল ডিটেলস, সিসিটিভি ফুটেজ ইত্যাদি দেখে পুলিসের সন্দেহ হয়। জেরায় ভেঙে পড়ে প্রেমিকের মাধ্যমে স্বামীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার কথা শেষমেশ স্বীকার করে স্ত্রী। আর অজিত-মনুয়ার ঘটনা তো এখন মানুষের মুখে মুখে গল্পকাহিনী হয়ে গিয়েছে।
শুধু সংবাদমাধ্যমে বহুচর্চিত ক্রাইম নয়, ফিমেল ক্রিমিনালিটি ইন ইন্ডিয়া’র মতো গবেষণাপত্র এবং ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র মতো কেন্দ্রীয় সরকারি তথ্য ভান্ডারও বলছে, অন্যান্য অপরাধ তো বটেই, খুনের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের সংখ্যা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। ২০০৫ সালে মহিলাদের হাতে খুনের সংখ্যা ছিল ৩৪৩৯। ২০০৭ সালে ৩৮১২, ২০০৯ সালে ৪০০৭। ২০১০ সালে একটু কমে তা ২০১১ সালে অনেকটা বেড়ে হয় সাড়ে চার হাজারের কাছাকাছি (৪৪৪৩)। ২০০১ সালে সব ধরনের অপরাধে মহিলাদের জড়িত থাকার ঘটনা ছিল ১,৪৪,৬০৮টি। ২০১১ সালে তা-ই বেড়ে হয় প্রায় দুই লক্ষের কাছে (১,৯৩,৫৫৫)।
এখন প্রশ্ন, কেন? রোজনামচার মতো মহিলা সংগঠিত অপরাধ এমন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ার কারণ কী? নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, নিশ্চিতভাবে এই প্রবণতা উদ্বেগজনক। স্বাধীনতা কখনও নিষ্ঠুরতা প্রকাশের জায়গা হতে পারে না। কিন্তু, অনেকক্ষেত্রে তাই মনে করছে মহিলারা। বিশিষ্ট মনোবিদ অমিত চক্রবর্তী বলেন, যদি বলি, আসলে মেয়েদের উপর অপরাধ বেড়েছে, তাই প্রতিরোধও বাড়ছে। আগে প্রতিরোধ হতো না, এখন হচ্ছে। কিন্তু, কারণ যাই হোক না কেন, বিষয়টি চিন্তার।