বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
বছরের পর বছর ধরে ভোট মানেই যে টিভি’র পর্দার এইসব দৃশ্য, তা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে অধিকাংশ রাজ্যবাসীর। ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এমন অজস্র দৃশ্য এখন লাখো মানুষের মোবাইলবন্দি। কিন্তু, শুধু তো প্রাপ্তবয়স্করাই নন, বাংলার হাজার হাজার বাড়ির খুদেরাও যে সকাল-সন্ধ্যা দেখছে ভোট-উৎসবের নামে এইসব উগ্র দৃশ্য। কখনও টিভিতে, কখনও কাগজে, কখনও আবার ডিজিটাল মিডিয়ায়—মোবাইল নিয়ে খুট খুট করতে করতে। এর পরিণতি কী হতে পারে?
শহরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিদরা জানালেন, ভোট নিয়ে হানাহানি, মারধর, একে অন্যের দিকে গালিগালাজ— বাড়ির খুদেদের মধ্যে এইসব দৃশ্যের ফল হবে সুদূরপ্রসারী। প্রথমত, তারা বুঝতেই পারবে না, এইসব বিশিষ্টজন, জনপ্রতিনিধি, অনেকের কাছে শ্রদ্ধেয় মানুষকে ঠিক কোন জায়গায় রাখবে? কোনটা খারাপ আর কোনটা ভালো, তা নিয়ে গভীর সংশয় ও দ্বন্দ্ব তৈরি হবে মনে। ভোট ও সংসদীয় রাজনীতি সম্পর্কেও এক ধরনের নিস্পৃহতা তৈরি হওয়া আশ্চর্য নয়। এ ধরনের নিস্পৃহতা থেকেই ভবিষ্যতে এই খুদেদের অধিকাংশ রাজনীতিতে আসতে চাইবে না। অন্তত বুদ্ধিমান, বিচক্ষণরা তো বটেই।
বিশিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ডাঃ দেবাঞ্জন পান বলেন, টিভির পর্দায় ভোট নিয়ে বড়রা ঝগড়া করছে, নিজেদের গালমন্দ করছে, অকথা-কুকথা বলছে— এসব দেখে ছোটদের মনে হতেই পারেই, কে ঠিক? তার বাবা-মা-দাদু-দিদা-ঠাকুরদা-ঠাম্মা বড়দের সম্পর্কে যে শ্রদ্ধার ছবি তুলে ধরেছে, সেটা ঠিক, নাকি টিভিতে বড়রা যা করছেন, সেটা? বিখ্যাত মানুষজন সম্পর্কে যে ধারণা তারা বইতে পড়ে তৈরি করেছে, সেটা ঠিক, নাকি, বিখ্যাত মানুষজন ভোটের লড়াইয়ে নামলে যে এমন হয়ে পড়েন, সেটা?
বিশিষ্ট মনোবিদ ডঃ অমিত চক্রবর্তী বলেন, ভোটের জন্য গুলিগোলা, খুন, রক্তের স্রোত টিভিতে দেখা ছোটদের জন্য ভয়ানক হতে পারে। নামকরা মানুষজনকে গালিগালাজের বন্যা ছোটাতে দেখে তারা ভালোমন্দের ফারাকই করতে পারবে না। অভিভাবকদের মাধ্যমে গড়ে তোলা বড়দের সম্পর্কে ধারণা এবং ভালো-মন্দের ফারাক সম্পর্কে একটি সংশয় তৈরি হবে মনে। বলা বাহুল্য, সেই সংশয় থেকে ভবিষ্যতে ভোট, সংসদীয় রাজনীতি থেকে তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে চাইবে। ভবিষ্যতে এসব নিয়ে কোনও অনুভূতি না থাকাটাও আশ্চর্য নয়। বলতে খারাপ লাগলেও এটা অনুমান করা অসঙ্গত হবে না যে, ভোটের অশান্তি দেখা এইসব খুদেদের সিংহভাগই ভবিষ্যতে সংসদীয় রাজনীতিতে আসতে চাইবে না। আমরা বারবার সুদক্ষ, উচ্চশিক্ষিত যে একঝাঁক যুবক-যুবতীকে রাজনীতির আঙিনায় খুঁজতে থাকি, খুঁজতেই থাকি, শেষে আর পাই না, তার অন্যতম কারণ কিন্তু এটাই। ভোট ও রাজনীতি মানেই হিংসা, গালি, কুকথার স্রোত— এ যদি তারা জীবনের গোড়াতেই বুঝে যায়, তাহলে পরে সেই জায়গায় আসবে?
মনোবিদ মৌপালী ঘোষ বলেন, টিভির পর্দায় ভোটকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত এই হিংসা দেখার আরও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে শিশুদের মনে। তারা এগুলি শিখলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ধৈর্য কমে যাওয়া, কথায় কথায় হাত তোলা, গাল দেওয়া—এগুলি যদি তথাকথিত বিখ্যাত মানুষজন, নেতারা করেন—তাহলে টিভি দেখে শিশুরা সেটা শিখলে, অনুকরণ করলে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে!