বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
সরকারি এবং প্রশাসনের কমিটি তো রয়েছে। তবে, হোমে আবাসিকদের নিজেদের মধ্যে রয়েছে এই চিল্ড্রেনস কমিটি। যে ‘প্রধানমন্ত্রী’র পদে রয়েছে, তার বয়স বছর ১৭। আসল বাড়ি আগ্রায়। মা নেই। বাবারও খোঁজ নেই। তার এক দাদা রয়েছে। বর্তমানে তিনি বাইরে থাকেন। তিনিই ২০০৮ সালে তাকে এই কিশলয় হোমে দিয়ে যান। ‘শিক্ষামন্ত্রী’র আসল বাড়ি জলপাইগুড়িতে। তার বয়স ১৬ বছর। তার দুই ভাই। সে ছোট। বাবার মৃত্যুর পর তার মা কাজে খোঁজে চলে এসেছিলেন কলকাতার দিকে। মায়ের সঙ্গে দুই ভাইও এসেছিল। পরিচারিকার কাজ পাওয়ার পর এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন তাদের মা। কিছুদিন পরই সৎ বাবা তাদের মা’কে খুন করে পালিয়ে যায়। যে বাড়িতে তারা ভাড়া থাকত, সেই বাড়ির মালিকই নাবালক দুই ভাইকে এই হোমে দিয়ে যান। ২০১০ সাল থেকে সে এবং তার ভাই এই হোমে রয়েছে। তার ভাই নবম শ্রেণীতে পড়ে।
অল্প বয়সেই প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর জীবনের উপর দিয়ে নানা ঝড় ঝাপটা গিয়েছে। তবুও তারা হার মানেনি। হোমে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা। হোম কর্তৃপক্ষ তাদের সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা দু’জন বারাসতের হৃদয়পুরের মানবতা হাইস্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে। টেস্ট পরীক্ষায় দু’জনে প্রথম বিভাগের কাছাকাছি নম্বর পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী একটু বেশি নম্বর পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী অঙ্কে লেটারও পেয়েছে। দু’জনেই ভাল ফল করবে বলে সকলেই আশাবাদী। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য হোম কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, সে প্রথম বিভাগেই পাশ করার চেষ্টা করবে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে, সে ভবিষ্যতে প্যারা মেডিক্যাল নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। শিক্ষামন্ত্রীর ইচ্ছে, সে উচ্চ মাধ্যমিকের পর অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করবে।
কিশলয় হোমের সুপারিন্টেডেন্ট মলয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, এবার এই দু’জনই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে। তাদের দু’জনের জীবনের ইতিহাস খুবই মর্মান্তিক। তবুও মনের জোরে তারা পড়াশোনা করছে। আমরা যতটা সম্ভব সহযোগীতা করছি। পরীক্ষা কেন্দ্রে তাদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারটিও আমরা খেয়াল রাখব। মঙ্গলবার তাদের গাড়িতে চাপিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা আশাবাদী, এই দু’জনই ভাল করবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সিডব্লুসি’র সদস্য কুহু দাস বলেন, এই আবাসিকদের জন্য আমরা সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজ রাখি। কারণ, তাদের বেশিরভাগই পরিবার-পরিজনকে হারিয়ে রয়েছে। কিন্তু, হোমে থেকেও তারা যে মাধ্যমিকের মতো বড় পরীক্ষায় বসছে, এটা অনান্য আবাসিকদের কাছেও একটা অনুপ্রেরণা।