বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
কিন্তু সত্যিই কি বাড়ির চাহিদা ফ্ল্যাটে মেটে? বুদ্ধিমানদের উত্তর, মেটে তো বটেই, বরং সঙ্গে এমন কিছু পাওয়া যায়, যা নেহাত এক চিলতে বাড়ির ক্ষেত্রে কোনওদিন পাওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই আজ মানুষ পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য বেছে নিচ্ছেন আবাসন প্রকল্পগুলিকেই।
কেন তাঁরা আবাসনের দিকে ঝুঁকছেন? প্রথমেই আসা যাক নিরাপত্তার কথায়। কর্মজীবনই হোক বা ব্যক্তিগত জীবন—যে কোনও মানুষই চায় নিরাপত্তা। বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও মানুষ সেই দিকটি মাথায় রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। বাড়িতে যদি শিশুরা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। নিরাপত্তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে আস্তানা খোঁজার মতো মুর্খামি আর কিছুতেই হয় না। যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বাড়ি করার কথা চিন্তা করেন, তাঁরা জানেন, সেখানে তাঁরাই বাড়ির বাসিন্দা। তাঁরাই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী। অর্থাৎ আলাদা করে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো কোনও বন্দোবস্ত করা নেই। যদিও বা করা যায়, তাহলে তা অনেক টাকার ব্যাপার। সেই খরচ জোগানো সাধারণ মানুষের পক্ষে একপ্রকার অসাধ্য। কর্মজগতে যাওয়া বা বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে তালা-চাবি যে আজকের দিনে যথেষ্ট নয়, তা মানেন সবাই। এক্ষেত্রে আবাসনগুলি যে অনেক বেশি নিরাপদ, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এখানে সর্বক্ষণ নিরাপত্তারক্ষী থাকায় অনেকটাই ভরসা করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা যেহেতু কোনও পেশাদার সংস্থা থেকে নিয়োজিত হন, তাই তাঁরা অনেক কঠিন পরিস্থিতি সামলান দক্ষ হাতে। কোনও হ্যাপাই এসে পৌঁছয় না ফ্ল্যাটের দোরগোড়ায়। তাছাড়া এখন শুধু নিরাপত্তারক্ষীরাই সামাল দেন না যাবতীয় বিষয়। নানা ধরনের উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে, যেগুলি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও আঁটোসাঁটো করেছে। অগ্নিনির্বাপণ থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যবস্থাও মজবুত করে সেই সব আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি।
বাড়ি সম্পর্কে এখন পুরনো ধ্যান ধারণা বদলে গিয়েছে। এখন বাড়ি মানে হরেক সুবিধা। সেখানে শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকতে চায় না মানুষ। এমন কিছু স্বাচ্ছন্দ্য আশা করে, যেখানে মেলে জীবনের পূর্ণতা। একমাত্র আবাসন প্রকল্পগুলিই দিতে পারে সেই বিষয়ে সব রকমের সুযোগ সুবিধা। খেলার মাঠ, জিম, সুইমিং পুল, বিভিন্ন ধরনের খেলার আয়োজন, হাঁটা বা দৌড়নোর জায়গা, মুক্ত পরিবেশে বসার জায়গা, একসঙ্গে সবাই মিলে কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য কমিউনিটি হল প্রভৃতি সুবিধাগুলি এখন পাওয়া যায় আবাসন প্রকল্পগুলিতে। যাঁরা শুধু আবাসন কেনেন, তাঁরা চার দেওয়াল আর মাথার উপর ছাদ কেনেন না। আসলে তাঁরা এমন একটি পৃথিবী কেনেন, যেখানে যাবতীয় নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য মেলে অনায়াসে।
বাড়ি না হয় যেমন তেমন করে হল, কিন্তু তার রক্ষণাবেক্ষণ? তা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। ব্যক্তিগত বাড়িতে হাজারো ঝামেলা। সেসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নির্দিষ্ট সময় অন্তর রং করা বা তার পরিচর্যা করার সময় বা মানসিকতা অনেকেরই থাকে না। এর সঙ্গে আছে নিত্যকার ঝামেলা। বাড়ির পাম্প খারাপ হলে, কলমিস্ত্রি ডাকো। ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে বা বিগড়ে গেলে তার জন্য মিস্ত্রিকে খবর দাও কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মীদের হাতেপায়ে ধর। আবর্জনা হলে সারা বাড়ি সাফসুতরো কর। এক কথায় ঝামেলার যেন শেষ নেই। কিন্তু আবাসন প্রকল্পগুলিতে সেসব ঝামেলা নিজেকে পোহাতে হয় না। সেখানে একটি মাত্র ফোন কলেই হাতের কাছে পাওয়া যাবে যাবতীয় পরিষেবা। শুধু নিজের ফ্ল্যাটটি নয়, গোটা আবাসন চত্বরেই পান থেকে চুন খসলে মিলবে জলদি পরিষেবা। এমন সুবিধাই তো চায় আজকের প্রজন্ম।
আসা যাক সামাজিকতার কথায়। এখন সব মানুষ ব্যস্ত। কাজের চাপ, কারও কাছে পারিবারিক বা সামাজিক চাপও কম নয়। সেসব সরিয়ে আলাদা করে সামাজিকতা রক্ষা করা কি সহজ কথা? অথচ সেসব না করলে একদিকে যেমন স্বার্থপরতার বদনাম জোটে, তেমনই নিজের বৃত্তও ছোট হয়ে আসে। তাহলে উপায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সমাধান অবশ্যই আবাসন। এখানে সামাজিকতা রক্ষার জন্য কাউকে কোনও নিয়ম মানতে হয় না। সবটাই হয় অনায়াসে। আবাসনগুলিতে নানা অনুষ্ঠান হয় হরেক উৎসবকে ঘিরে। সেখানে যোগ দেয় সবাই। দুর্গাপুজোর মতো উৎসব তো এখন প্রায় সব আবাসনেই পালিত হয় ধুমধাম করে। একসঙ্গে অঞ্জলি, এক পংক্তিতে বসে ভোগ খাওয়া যেমন চলে, তেমনই বর্ষবরণ বা বড়দিনের মতো অনুষ্ঠানেও সবাই আনন্দে মাতে একযোগে। শিশুরাও নিজেদের মতো বন্ধু খুঁজে পায়। পড়শির সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ান বয়স্করাও। বোস বাবু, ঘোষ বাবু, রহমান সাহেবদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান আগরওয়াল, গোমস’রা। এ যেন আসলেই একটি বৃহৎ পরিবার। এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে একাত্ম সবাই। একযোগে সবাই মিলে বেঁচে থাকার আনন্দই আলাদা। অনেক আবাসনেই এখন মেডিক্যাল সেন্টার, বাজার বা শপিং মল তৈরি হচ্ছে। সেসব ক্ষেত্রে তো সোনায় সোহাগা।
আসা যাক টাকা-পয়সার কথায়। যে কোনও বিচক্ষণ মানুষ মেনে নেবেন, আবাসন প্রকল্পগুলি সাধারণ বাড়ি তৈরির চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ী। ফ্ল্যাট তৈরির টাকা জোটানোও সহজ। এখন আবাসন প্রকল্পগুলির সঙ্গে ব্যাঙ্কের সংযোগ থাকায় সহজেই ঋণ পাওয়া যায়। তাছাড়া সব রকমের সুবিধা দেওয়ার পরই যে দামে আবাসন প্রকল্পে ফ্ল্যাট কেনেন সাধারণ মানুষ, তাতে ইএমআইয়ের অঙ্কও কম হয়। এ তো গেল এককালীন খরচের বিষয়। নিজস্ব ব্যক্তিগত বাড়ি হলে, তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে খরচ করতে হয়, আবাসনের সেই খরচ যে অনেক কম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন সোলার এনার্জি বা বৃষ্টির জল ধরে রেখে তাকে কাজে লাগানোর মতো প্রকল্প গড়ে তোলে একাধিক আবাসন সংস্থা। তাতে যেমন একদিকে খরচ বাঁচে, তেমনই সবুজের অভিযানে নিজেদের শামিল করা যায়।
এখন ছোট পরিবারের যুগ। সুখী পরিবার মানেই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। সেখানে জায়গার চাহিদা কম। ঘুরিয়ে বললে, জায়গা অপচয়ের সম্ভাবনাও কম। আমার বা আমার পরিবারের জন্য কতটা জায়গা পেলে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে পারব, তার হিসেব আমার কাছেই আছে। সব মানুষই আন্দাজ রাখেন, তাঁর ঠিক কতটা জায়গা দরকার। আবাসন প্রকল্পগুলিতে আছে প্রত্যেক মানুষের নিজেদের চাহিদা মতো ফ্ল্যাট। সেই ফ্ল্যাটটি এক বেডরুমের হবে, নাকি তিন বেডরুমের, তা বাছাইয়ের পূর্ণ অধিকার থাকে গ্রাহকের। অকারণে পয়সা খরচ করা যেমন এই প্রজন্মের ধাতে নেই, তেমনই পকেটের রেস্ত অনুযায়ী ফ্ল্যাটের আকার নির্ধারণেও এখন আবাসনগুলি অনেক বেশি সচেতন। মোট কথা, এখন সব দিক থেকে আবাসন প্রকল্প অনেক বেশি স্মার্ট। সুবিধা সব পক্ষেরই। কর্পোরেট ভাষায় যাকে বলে, ‘উইন-উইন সিচুয়েশন!
আবাসন কেন ভালো, সেই হিসেব কষতে গিয়ে এখন অনেক বিষয় সামনে আসে, যেগুলি সাধারণ মানুষের অভিধানে থাকে না। নিজের জন্য বাড়ি করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ছাড়পত্র নেওয়ার হ্যাপা, রাজনৈতিক চাপ সামলানোর ঝুঁকি, ঠিকঠাক গুণমানের জিনিস কেনার ঝক্কি বা নিখুঁতভাবে বাড়ি গড়ে তোলার মতো বিষয়কে অনেকেই আগেভাগে মাথায় রাখেন না। কাজে নেমে সেসব হ্যাপা সইতে হয়। ধৈর্য্যচ্যুতি হওয়া সেখানে স্বাভাবিক বিষয়। আবাসন প্রকল্পে সেসব সমস্যা নেই, মানেন সবাই। এক কথায়, সুখে জীবন কাটাতে অন্যের উপর ভার ন্যস্ত করার মতো সুযোগ পাওয়া যায় একমাত্র আবাসনেই। এটুকু মেনে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারও।