কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
আদতে অসমের ডিমাপুর, কলগাছির বাসিন্দা রহিম সামরিক বাহিনীতে গাড়ি চালাতেন। তাগড়াই চেহারার সঙ্গে মানানসই গোঁফও লালনপালন করতেন। এহেন যুবককে জামাই হিসেবে বরণ করেছিলেন ওই রাজ্যেরই বঙ্গাইগাঁও, গোয়ালপাড়ার নায়েব আলি। ২০০৯ সালের ১৮ মার্চ মেয়ে আকলিমাকে পর্যাপ্ত যৌতুক সহ তুলে দেন রহিমের হাতে। যদিও বিয়ের পর রহিম চলে যায় জম্মু ও কাশ্মীরে। আকলিমা রয়ে যায় শ্বশুরবাড়িতে। আরও পণের দাবিতে সেখানে অত্যাচার হতে নায়েব মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসেন। পরে জামাইয়ের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের লিখিত চুক্তি হয়। আকলিমাকে নিয়ে রহিম চলে আসে কলকাতার ময়দান এলাকায় অবস্থিত কমান্ড হসপিটাল কমপ্লেক্সে।
ঘটনার কয়েকদিন আগে নায়েব মেয়ের ফোনে জানতে পারেন, সে ফের অত্যাচারিতা। ভায়রাভাইকে সঙ্গে নিয়ে ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট নায়েব চলে আসেন কলকাতায়। তাঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সামরিক অফিসার রহিমের ফ্ল্যাটে আসেন। তাঁরা আশ্বাস দেন, এই দম্পতি অবশ্যই ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেবেন। এমন ঘটনা আর হবে না। রাতে ফ্ল্যাটের অন্য ঘরে নায়েবরা শুতে যান। তখন ছিল রোজার মাস। রাত ৩.৪৫ মিনিটে তাঁরা ঘুম থেকে উঠে রোজার আচরণবিধি পালন করেন। সকাল ছয়টা নাগাদ জামাই ডিউটিতে চলে যায়। কিন্তু, সকাল ৭.৩০ মিনিট নাগাদ পাশের ঘর থেকে ‘আমায় বারান্দা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে’ বলে মেয়ের চিৎকার শুনে তাঁরা সচকিত হন। কাঁচের জানালা দিয়ে জামাই-এর হাতও তাঁরা দেখতে পান। মুহুর্তে ঘরের বাইরে এসে দেখেন, জামাই পালাচ্ছে। দৌড়ে নিচে নেমে দেখেন, মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে। জামাই উধাও। এক সিপাই-এর সাহায্যে কমান্ড হাসপাতালে মেয়েকে তাঁরা ভর্তি করেন। সেখানেই ১০ দিন পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
আলিপুর থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগের জেরে আলিপুর আদালত ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রহিমকে যাবজ্জীবন সাজা শোনায়। যা তিনি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন। ‘ঘটনার সময় ডিউটিতে ছিলাম। স্ত্রী’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মধুর’- নিম্ন আদালতে এমনি দাবি করেছিলেন রহিম। তাঁর আইনজীবী হাইকোর্টে দাবি করেন, সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তিন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অন্যদিকে, সরকারি আইনজীবী বিনয় পাণ্ডা আদালতকে জানান, ঘটনার সময় মৃতের বাবা ও তাঁর আত্মীয় ছাড়াও এক ঘাসকাটা শ্রমিক যে সেখানে ছিলেন, তা মেনে নিয়েছেন রহিম। আকলিমার চিৎকারে তার বাবার মতো ওই শ্রমিক বাসু দাসও চমকে উঠেছিলেন। নায়েব বারান্দার রেলিং-এর বাইরে এগিয়ে থাকা জামাই-এর হাত দেখেছিলেন। কিন্তু, বাসু আকলিমার চিৎকারে সচকিত হয়ে ঘটনাবলির প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছেন। আকলিমাকে পড়তে দেখে তিনি ফ্ল্যাটের নীচে চলে আসেন। দৌড়ে পালাতেও দেখেন রহিমকে। রহিমের তাগড়াই চেহারার সঙ্গে মামানসই গোঁফটি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ফলে টিআই প্যারেডে রহিমকে চিহ্নিত করতে তাঁর অসুবিধা হয়নি।
রহিমের তরফে বলা হয়, হাসপাতাল কম্পাউন্ডের পাঁচিলের ওপারে থাকা বাসু’র পক্ষে ওই ঘটনা দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু, বেঞ্চ বলেছে, সাততলার বারান্দার ঘটনা পাঁচিলের ওপার থেকে না দেখতে পাওয়ার কোনও কারণ নেই। যে বারান্দার রেলিং-এর উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট ও হতভাগ্যের উচ্চতা পাঁচ ফুট, সেখানে সুস্থ-সবল মেয়েটির পড়ে যাওয়া অসম্ভব। রহিম প্রমাণ করতে পারেনি, ঘটনার সময় সে অফিসেই ছিল। বরং, ঘটনার পর সে উদভ্রান্ত অবস্থায় এক সহকর্মীকে জানায়, স্ত্রী বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছে। তখন সহকর্মীর প্রশ্ন ছিল, স্ত্রীকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে, এখানে কেন? আর সরকারি আইনজীবীর প্রশ্ন ছিল, ডিউটিতে থাকা অবস্থায় রহিম জানল কী করে, স্ত্রী পড়ে গিয়েছে?