বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
ধর্মঘটের মূল উদ্যোক্তা নামে বাম ও ডানপন্থী শ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনগুলি হলেও কার্যত গোটা বাম শিবিরই আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমেছিল। দীর্ঘ প্রচারের পাশাপাশি এবার ধর্মঘটের ন্যূনতম সাফল্য রাজ্যবাসীর সামনে আনার তাগিদে বেশ কিছু রণকৌশল নিয়েছিল নেতৃত্ব। সেই মতো এদিন সকাল থেকেই রাজ্যের অসংখ্য জায়গায় রেল ও রাস্তা অবরোধে শামিল হয় সমর্থকরা। পরিণামে কোথাও পুলিস, কোথাও শাসকদলের সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। তবে ধর্মঘট করতে বাধা দেওয়ায় শাসকের তরফে আক্রমণের পাল্টা হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা। কোথাও স্কুল পড়ুয়া বা পরীক্ষার্থীদের বাসে, কোথাও নিত্যযাত্রীদের যানবাহনের উপর চড়াও হয় তারা। এজন্য পথে নামা সাধারণ মানুষের একাংশকে আতঙ্ক ও দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়। তবে এর জন্য তেমন নিন্দার কথা শোনা যায়নি নেতাদের মুখে। বরং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ইট মারলে পাটকেল খেতেই হবে। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর নানা জায়গায় পুলিস ও তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ এদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে। আর তাতে রেগে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ও পুলিস সর্বত্র আক্রমণের রাস্তা বেছে নিয়েছে। সেই আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। বুধবার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে এই প্রতিরোধ আরও তীব্র হবে।
ধর্মঘটের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে এবারেও যথারীতি শাসক-বিরোধী চাপান-উতোর অব্যাহত থেকেছে। সূর্যকান্তবাবু এবং ধর্মঘটের উদ্যোক্তাদের তরফে সুভাষ মুখোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন, শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে এদিন গ্রামবাংলাতেও ধর্মঘটের প্রভাব ছিল আশাতীত। কয়লা, ইস্পাত, চা, চট, বন্দর, ব্যাঙ্ক, বিমার মতো প্রধান ক্ষেত্রগুলি সহ যাবতীয় শিল্পে শ্রমিকদের মোদিবিরোধী অবস্থান এদিন স্পষ্ট হয়েছে। এই সব জায়গায় প্রায় ১০০ শতাংশ ধর্মঘট হয়েছে। বিদ্যুৎ শিল্পেও ধর্মঘটের প্রভাব এবার যথেষ্ট পড়েছে। প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ার ছবিই বলে দেবে শিল্পক্ষেত্রের পরিস্থিতি কেমন ছিল। পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। জোর করে সরকারি বাস চালালেও বেসরকারি পরিবহণ সেভাবে রাস্তায় নামেনি। তবে মূল বিষয় হল, যাত্রীর সংখ্যা ছিল অন্যদিনের তুলনায় নগণ্য।
ধর্মঘটের সাফল্য দেখে সিপিএম তথা বাম নেতৃত্ব নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরে স্বস্তি পেয়েছে ঠিকই। তবে এদিন রাজ্যের পরিস্থিতির ছবি থেকে তাঁদের রাজনৈতিক পাওনা অনেক বেশি বলে মনে করছেন সূর্যকান্তবাবুরা। সেটা বুঝিয়ে দিতে তাঁরা খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ধর্মঘট ব্যর্থ করতে তৃণমূল বা নবান্নের ভূমিকা এদিন তাদের মোদি তথা বিজেপি সরকারের এক নম্বর দোসর হিসেবেই বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। গোটা দেশের অন্যত্র, এমনকী বিজেপি শাসিত রাজ্যেও ধর্মঘটের বিরুদ্ধে এমন ভূমিকা নেয়নি সেখানকার সরকার। একই সুরে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেস তথা বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট ভাঙতে রাজ্য সরকার যে আচরণ করেছে, তা মমতা-মোদি সখ্যের বার্তাই স্পষ্ট করেছে।