বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পেশায় ব্রিটিশ সরকারের আধিকারিক কৃষ্ণদাস চন্দ্রের খেলার সঙ্গী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কৃষ্ণদাসবাবু সাহিত্য পত্রিকা শুরু করার ভাবলে কবিগুরু তার নাম দেন ‘অচ্চর্না’ (সেকালে এমন বানান ছিল)। কয়েকদিনের মধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা পায় ওই সাহিত্য পত্রিকা। একটা সময় মাসে এক লক্ষের উপর ছাপা হতো। রাজ্যে পত্রিকা বিতরণের দায়িত্ব পড়ে বড়বাজার ডাকঘরের উপর। দু’বছরের মধ্যে বড়বাজার জানিয়ে দেয়, তারা এই বিপুল চাপ নিতে পারবে না। কৃষ্ণদাসবাবুও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি তত্কালীন বড়লাট লর্ড কার্জনকে চিঠি পাঠালেন। জানতে চাইলেন, পরিস্থিতি এরকম হলে পত্রিকা বন্ধ করে দিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের অভিমত কী? চিঠি পেয়ে বড়লাটের নির্দেশে ১৯০৬ সালে একটি টালির চালের বাড়িতে শুরু হয় ‘অর্চনা’ ডাকঘর। যার একমাত্র কাজ ছিল এই পত্রিকা বিতরণ। ১৯১৭ সালে এই ডাকঘর কৃষ্ণদাসবাবুর এক বন্ধুর বাড়িতে ভাড়ায় উঠে আসে। তখন থেকে ১০ নম্বর পার্বতীচরণ ঘোষ লেনেই রয়েছে এই ডাকঘর।
পত্রিকার পথচলা শুরু ১৯০৪ সালে। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হতো পত্রিকা। তখন পত্রিকার দাম ছিল ৬ আনা। আর ডাকযোগে বার্ষিক মূল্য ছিল ৪ টাকা ১৪ আনা। এই ডাকঘরকে যাতে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়, তার জন্য কৃষ্ণদাসের পৌত্র সৌরভ চন্দ্র বহু চেষ্টা করেছেন। লাভ কিছু হয়নি। এখন ডাকঘরের সামান্য ভাড়ার টাকাও নেন না বাড়িওয়ালা। সেই পরিবারের এক সদস্যার কথায়, ‘ওই সামান্য টাকা ভাড়া আমরা নিই না। ডাক বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি ঠিক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
সেকালে কৃষ্ণদাসের বাড়ি ‘অর্চনা ভবন’-এ অর্চনা সাহিত্য পরিষদ নামে সাহিত্য সভা হতো। সেখানে উপস্থিত থাকতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুকান্ত ভট্টাচার্য, শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গিরিশ ঘোষ প্রমুখ। সৌরভবাবুও হন্যে হয়ে খুঁজে ‘অর্চ্চনা’র কয়েকটি সংখ্যা জোগাড় করেছেন। দীর্ঘ ৫৭ বছর পথচলার পর ১৯৬০ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই পত্রিকা। পত্রিকার শেষ সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণদাসবাবুর আর এক ছেলে রণজিত্ চন্দ্র ও প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র। সৌরভবাবু বলছিলেন, ‘পত্রিকায় টাটা স্টিল, সুলেখা, রেলের বিজ্ঞাপন আসত। সেই সময় সিনেমার পত্রিকার রমরমা শুরু হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ‘অর্চ্চনা’।’ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলেও অনাদরে, অবহেলায় আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই ডাকঘর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাকঘরের এক কর্মী বলছিলেন, ‘মাত্র দু’জন কর্মী নিয়ে কাজ চলছে। মাঝে মধ্যে উপরমহল থেকে লোক এসে অফিসের হাল দেখে যান। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আমরাও চাই, এই রকম একটা ঐতিহ্যশালী ডাকঘরের রক্ষণাবেক্ষণ হোক।’ -নিজস্ব চিত্র