কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
প্রশ্ন: প্রথম প্রশ্নটা আগামীর পর্যায় দিয়ে। খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রকাশ্য সভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা কি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বাড়তি পাওনা?
উত্তর: বাড়তি পাওনা তো বটেই। আরও চারটি আসনে নির্বাচন বাকি আছে। সবার আগে আমার নাম নেত্রী ঘোষণা করে দিয়েছেন। এটা তাঁর মহানুভবতা। খড়দহের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা... তাঁদের পাশে থাকায় আরও সুবিধা হয়ে গেল।
প্রশ্ন: ত্যাগ ও ভালোবাসা— রাজনীতির মূলমন্ত্র কি এটাই?
উত্তর: আমি নিয়মানুবর্তিতা ও দলের নির্দেশ মেনে চলি। ফলে আমার প্রতি মমতা সুবিচার করেছেন। নেত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন। খড়দহ খুব দূ্রে নয়। এক ঘণ্টার রাস্তা। কোনও অসুবিধা হবে না। কলকাতায় রাজ্য প্রশাসনের সদর দপ্তর। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে অনেক সুবিধা হবে।
প্রশ্ন: তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর প্রথম বিধায়ক আপনি। ইতিহাসে লেখা থাকবে। আপনার অনুভূতি?
উত্তর: এর কৃতিত্বও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ব্যক্তি শোভনদেব শুধু নামের পরিচয়। কিন্তু বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া, শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব, মন্ত্রী হওয়া—সবটার সঙ্গে জড়িয়ে নেত্রী।
প্রশ্ন: ঘরের কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন আপনি। আবার ঘরের মেয়ের জন্য পদত্যাগ করেছেন। নেত্রীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা পরবর্তী প্রজন্মের তো অনুসরণ করা উচিত?
উত্তর: বিজেপির রথ থামিয়ে দিতে পারেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। দেশের প্রয়োজন এমন এক নেত্রীর। আর এই নেত্রীর জন্য আমি বারবার পদত্যাগ করতে পারি... বারবার ভবানীপুর ছাড়তে পারি।
প্রশ্ন: উপনির্বাচন হলেও ভবানীপুরের লড়াই তো জমজমাট। সারা দেশ তাকিয়ে রয়েছে। কী বার্তা দেবেন?
উত্তর: নন্দীগ্রামের মানুষের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে সেখানে প্রার্থী হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু বিজেপি নন্দীগ্রামে চক্রান্ত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দিয়েছে। বিজয়ী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করার পর ফের পরিবর্তন। বিষয়টি এখন বিচারাধীন। তবে ভবানীপুরের দেওয়ালে লেখা হয়ে গিয়েছে, ঘরের মেয়ে থাকবে নবান্নে।
প্রশ্ন: মমতা ও ভবানীপুর, কীভাবে আলোকপাত করবেন?
উত্তর: মমতা এখানকার মানুষের কাছে শুধু পরিচিত নন, তিনি বাস্তবিকই ঘরের মেয়ে। যে মেয়েকে ভবানীপুরবাসী লোকসভা নির্বাচনে জিতিয়েছেন। বিধায়ক নির্বাচিত করেছেন। মমতা কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছেন। আবার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভারও সামলাচ্ছেন। এই ভবানীপুর থেকেই দলের উৎপত্তি, মমতার উত্থান। ফলে সম্পর্কটা মোটেও ঠুনকো নয়, বা হঠাৎ তৈরি হয়নি। ফলে মমতার প্রতি এবারও আস্থা রাখবেন ভবানীপুরের মানুষ। নানা সংস্কৃতির মিশেল এই কেন্দ্র। মমতার অত্যন্ত আপন। যে জায়গাটা অন্য কেউ নিতে পারবে না।
প্রশ্ন: ভবানীপুরকে বলা হয় মিনি ভারতবর্ষ। অবাঙালি ভোটার ৪০ শতাংশ। সব ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে কি আসছে?
উত্তর: তার-মান-সুর, এই তিন নিয়ে ভবানীপুর। বহু জ্ঞানী মানুষ এই ভবানীপুরের বাসিন্দা। এই ভবানীপুরের ঐতিহ্য আছে কালের স্রোতে। পাঞ্জাবি, গুজরাতি, মাড়োয়ারি, বিহারি, মুসলিম, হিন্দু—বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য তো একেই বলে! সব ধর্মের অনুষ্ঠানে সকলে মিলে মিশে যান। ২০২১ সালে সারাদেশের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মরিয়া একটা হাওয়া তুলেছিল বিজেপি। তাতে কিছু মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের বিপুল জয় তাদের ভুল প্রমাণ করেছে। শুধু তাই নয়, ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিন মাসের মধ্যে পূরণ করেছেন মমতা। মানুষ এবার মমতাকে ভোট দিতে হাইরাইজ বিল্ডিং থেকে বুথমুখী। আমার বিশ্বাস, ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক, সব উপেক্ষা করে মানুষ বৃহস্পতিবার দাঁড়াবে মমতার পাশে। বিজেপির কোনও ধাপ্পা আর ধোপে টিকবে না।
প্রশ্ন: মমতার উন্নয়ন ও বিজেপির বিভাজন, এটা কি আপনাদের আদর্শের লড়াই?
উত্তর: ওরা সব কাজে সমালোচনা করে, বাংলার জন্য কিছু করে না। আমাদের লক্ষ্য, অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্তিশালী করা। মমতার নেতৃত্বে কনস্ট্রাকটিভ বেঙ্গল তৈরি হচ্ছে। গঠনমূলক-উন্নয়নমূলক বাংলা তৈরি করার জন্য মমতার সঙ্গে থাকতে পেরে আমি নিজেও খুব খুশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একাধিক প্রকল্প বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি লাভ করেছে। মমতার একটা প্রকল্পও ব্যর্থ হয়নি। প্রত্যেকটা প্রকল্প কৃষক, শ্রমিক, মহিলাদের অর্থনৈতিক শক্তি জোগাচ্ছে। স্টুডেন্টদের ক্রেডিট কার্ড। পশ্চিমবঙ্গের একজন মানুষও এই সরকারের আমলে অনাহারে মারা যাবেন না। ফ্রি রেশনের ব্যবস্থা করেছেন মমতা। ধাপে ধাপে উন্নতি করছে বাংলার অর্থনীতি। পজিটিভ প্ল্যান নিয়ে সরকার এগিয়ে চলেছে। আর মমতার সঙ্গে উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না বলেই বিজেপির বাঙালি-অবাঙালি, ধর্মীয় বিভাজনের তাস খেলছে। বিভাজন কখনও ভারতের ঐতিহ্য নয়। আমরা যাঁদের পথপ্রদর্শক মানি, তাঁরা কেউ বিভাজনের কথা বলেননি। তাই ভেদাভেদ নয়, ভোট হবে কাজের ভিত্তিতে।
প্রশ্ন: ২৮ হাজার ভোটে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন আপনি। উপনির্বাচনে কী হবে?
উত্তর: ২৮ হাজারের ডবল ভোটের ব্যবধানে জিতবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ভবানীপুর দিচ্ছে ডাক মমতা নবান্নে থাক—এটাই এবার আপনাদের স্লোগান। ২০২৪ সালে কী হবে? ভবানীপুর দিচ্ছে ডাক ঘরের মেয়ে দিল্লিতে যাক...?
উত্তর: তেমন একটা আওয়াজ উঠে গিয়েছে এখনই। আর দেখুন, বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালীর মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছেন মমতা। নরেন্দ্র মোদির নাম আছে, কিন্তু তাঁর সমালোচনাও প্রচুর। কারণ, তুমি বিভাজন করেছ, উন্নয়ন করতে পারনি। আর হাওয়াই চটি, অল্প দামের শাড়ি পরে বাংলাকে আজ বিশ্ব দরবারে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মমতা। ফলে বিরোধীদের প্রধান মুখ তিনিই। ভারতের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে মমতার মতো কর্মঠ ও প্রগতিশীল মানুষ জায়গা করে নেবেন... সেটাই তো স্বাভাবিক! মমতা সবাইকে নিয়ে চলতে পারেন... এটাই সারসত্য। তিনি বর্তমান, তিনিই ভবিষ্যৎ। -ফাইল চিত্র