পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
সংস্কৃত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতের জন্য বরাদ্দ আসন সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র জেনারেল ক্যাটিগরির ছাত্রছাত্রীদের জন্যই সংখ্যাটা ৩৩। সেখানে বাংলা এবং ইংরেজির মতো চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে আসন সংখ্যা যথাক্রমে ২৫ এবং ২৮। সংস্কৃতের জন্য অসংরক্ষিত ৩৩টি আসনের মধ্যে মাত্র পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সংরক্ষিত আসন ধরলে এখানে সংস্কৃত অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে পারেন ৬৫ জন। ছ’জন তফশিলি জাতিভুক্ত পড়ুয়া সেখানে ভর্তি হওয়ায় মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১। অর্থাৎ মোট ৫৪টি আসন এখনও খালি। অন্যান্য বিষয়ে ভর্তির হারও আশাব্যাঞ্জক নয়। তবে ছবিটা সংস্কৃতের মতো এত করুণও নয়।
গত বেশ কিছু বছর ধরেই কলেজগুলিতে সংস্কৃত নিয়ে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা হাতে গোনা। তবে এই বিষয়ের শিক্ষক পর্যাপ্ত সংখ্যায় রয়েছেন কলেজগুলিতে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে সার্বিক অনীহার একটা আঁচ যে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়েও লাগবে, সেটা স্বাভাবিক। তবে এই প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রেক্ষিতটি আলাদা। মূলত, সংস্কৃত ভাষাচর্চা এবং তার উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্য নিয়েই ১৮২৪ সালে এই কলেজের পত্তন হয়েছিল। ২০১৬ সালে কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এখানে পঠনপাঠনের মূল বিষয় সংস্কৃত। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে থেকেই এখানে সংস্কৃত এমএ পড়ানো হতো। অন্যান্য বিষয়ে এমএ পড়ানো শুরু হয় অনেক পরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলের সদস্য, বিশিষ্ট ভাষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের কথা যদি ছেড়েও দিই, তাহলেও মনে করিয়ে দিতে হয়, বিদ্যাসাগর এই কলেজের ছাত্র ছিলেন। পরে শিক্ষক এবং অধ্যক্ষও হন। বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান স্থপতির জন্মদিনে এই খবর খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয়। তবে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়াভর্তির সংখ্যার চেয়েও আমি বেশি ভাবিত সংস্কৃত ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে। স্কুলে সংস্কৃত পড়ানো প্রায় উঠেই গিয়েছে। তাই একদিকে যেমন চর্চা কমেছে, অন্যদিকে স্কুলস্তরে শিক্ষকের চাহিদাও নেই। ফলে পেশাগত চাহিদাপূরণে পিছিয়ে পড়েছে এই ভাষা। কলেজে এখন পড়ানো হলেও বুনিয়াদি স্তরটি শক্তপোক্ত না থাকায় পড়ুয়ারা ভালো করে ভাষাটি শিখে উঠতে পারেন না। পাঠ্যক্রম নিয়েও তাঁর আপত্তি রয়েছে। তিনি মনে করেন, এই প্রতিষ্ঠানটিকে পঠনপাঠনের চেয়ে সংস্কৃত গবেষণার উৎকর্ষকেন্দ্র হিসেবেই বেশি করে গড়ে তোলা উচিত। তাহলেই এর ঐতিহ্য রক্ষা সম্ভব। ভাষাটির জন্যও তা ভালো।
সংস্কৃত নিয়ে অন্যান্য কলেজে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হলেও এই প্রতিষ্ঠান তাঁদের প্রথম পছন্দ হচ্ছে না কেন? এখানকার এক অধ্যাপক বলেন, সংস্কৃত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তর দেবনাগরী হরফেই লিখতে হয়। পড়ানোও হয় সেভাবে। অন্যত্র বাংলায় লেখার ছাড় রয়েছে। একথা ভেবেই অনেকে ঐতিহ্যমণ্ডিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এড়িয়ে যাচ্ছেন।