সংবাদদাতা, বনগাঁ: পুজোর বাকি আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন। বছরের এই একটি সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকেন ঢাকিরা। পুজোর সময় বাড়তি আয়ে সারা বছর সংসার চালান তাঁরা। তবে করোনা আবহে ঢাকিদের বাড়তি আয়ে ভাটা পড়েছে। গত দু’বছর ধরে তেমন বায়না জুটছে না বলেই জানান তাঁরা। দু’বছর আগেও এই সময় ঢাকিদের মধ্যে ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাক ঝেড়ে মুছে নতুন করে বাঁধন দিতেন তারা। এবছর এখনো সে ছবি দেখা যায়নি। বাপ-ঠাকুর্দার সময় থেকে ঢাক বাজিয়ে আসছেন বনগাঁ শক্তিগড়ের বাসিন্দা বিষ্ণুপদ দাস। এদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল অন্য ছবি। এখনও যত্ন করে ঘরের আড়ায় বেঁধে রেখেছেন ঢাকগুলি। তাতে ধুলো পড়েছে। বিষ্ণু দাস বলেন, প্রতিবছর প্রায় দশটি ঢাক ভাড়া দিতাম। নিজেও বাজাতাম। গতবছর থেকে ভাড়া নেই বললেই চলে। গতবছর বাইরে থেকে কোনো বায়না হয়নি। এলাকায় মাত্র চারটি ভাড়া তাও কম পয়সায়। ঢাকগুলি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কী করে জোগাড় হবে সেটাই চিন্তার বিষয় বিষ্ণুবাবুর কাছে। প্রতিবছর পুজোর চারদিন আগে প্রায় ১০০ জনের দল নিয়ে শিয়ালদহ চলে যেতেন বনগাঁ ঠাকুরপল্লির বাসিন্দা চিত্ত দাস। সেখানে ঢাক বাজিয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের খুশি করে জুটত বায়না। পাড়ি দিতেন মুম্বই, চেন্নাই, নাগপুর, কানপুর প্রভৃতি জায়গায়। পুজোর অনেক আগে থেকেই ফোনে যোগাযোগ করতেন পুজো উদ্যোক্তারা। ২০১৯ সাল থেকে বায়না বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দলের সদস্যরাও অনেকেই পেশা বদলে অন্য কাজে যোগ দিয়েছেন। মন খারাপ চিত্ত দাসের। তিনি বলেন, পুজোর সময় বাইরে ঢাক বাজিয়ে ১২-১৫ হাজার টাকা পাওয়া যেত। মিলত বকশিস। গত তিনবছর ধরে একটিও বায়না আসেনি। এলাকায় ঢাক ও বাদ্যযন্ত্র সারাইয়ের একটি দোকান রয়েছে চিত্ত দাসের। অন্যান্য বছর পুজোর চারমাস আগে থাকতে দোকানে ২৫-৩০টি ঢাক থাকত সারাইয়ের জন্য। এবছর এখনও একটিও ঢাক আসেনি। জানান তিনি। চিত্ত দাস আরও জানান, করোনা আবহে সমস্ত অনুষ্ঠানই নামমাত্র হচ্ছে। ফলে কদর কমেছে সমস্ত বাজনার।
বায়না না-হওয়ায় সংসার চালানোই তাঁর কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। কাঠ ও চামড়া দিয়ে একটি ঢাক তৈরির খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সারাবছর রক্ষণাবেক্ষণ করতেও বেশ টাকা খরচ হয়। সেসব তুলতেই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে বিষ্ণু দাস, চিত্ত দাসের মতো ঢাকিদের।