বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সালটা ২০১৫। কাঠের চামচ তৈরির কারখানা চালিয়ে ভালোই দিন কাটছিল বনগাঁ ১ নং মাইলপোস্টের বাসিন্দা রাজর্ষি সিকদারের। কিন্তু সেবার পুর নির্বাচনে ভোটে লড়ার ইচ্ছা হয় রাজর্ষির। বিজেপি প্রার্থী হিসেবে টিকিটও পেয়ে যান তিনি। তবে ভোটে হার মানতে হয় তাঁকে। এদিকে, ভোটে লড়তে গিয়ে জমানো অর্থ শেষ হয়ে যায়। স্বপ্নের চামচ কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন রাজর্ষি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েলেও দমে যাননি। বনগাঁ- শিয়ালদহ শাখায় লোকাল ট্রেনে চা বিক্রি শুরু করেন। চা বিক্রির মধ্যে নতুন কিছু করতে হবে, এই ভাবনা তাঁকে কুরেকুরে খাচ্ছিল। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। বন্ধুর পরামর্শে চায়ের একটি ব্র্যান্ড নাম রাখেন, ‘চিন্টু ভাইয়ের স্পেশাল চা’। এই ব্র্যান্ড নামই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ভালোই চলছিল চায়ের ব্যবসা। এরই মধ্যে নতুন করে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় লোকাল ট্রেন। নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়েন রাজর্ষি। ফের নতুন করে ভাবনা শুরু করেন। ঠিক করেন, সাইকেলে চেপে চা বিক্রি করবেন। সেই মতো কাজও শুরু করে দেন। এদিকে, ট্রেনে কাজ করার সময়ই হাঁক দিতে দিতে গলার সমস্যা দেখা দিয়েছিল। জোরে হাঁক দিতে বারণ করেছিলেন চিকিৎসক। ফলে এসে জুটল আরেক নতুন সমস্যা। তবে এবারও দমে না গিয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে কিনে ফেলেন কলার মাইক্রোফোন সেট। সেই মাইক্রোফোন সেটেই হাঁক ছাড়ছেন চিন্টু। দিন দিন বনগাঁবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চিন্টুর স্পেশাল চা।
স্ত্রী ও এক পুত্রসন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই তৈরি করেন চা। ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় ও সুস্বাদু হওয়ার জন্য চায়ে নানা রকম ভেষজ মশলাও ব্যবহার করেন তিনি। লিকার চা, লেবু চা, দুধ চা— সবই মেলে তাঁর কাছে। সকাল ৭টা বাজলেই সাইকেলে চায়ের ফ্লাস্ক নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন চিন্টু। কলার মাইক্রোফোন সেটে হাঁক ছাড়েন, এই সেই চিন্টু ভাইয়ের স্পেশাল চা। চলে এসেছে চিন্টু ভাইয়ের স্পেশাল চা। তবে আর রাজনীতিতে আসতে চান না। জীবন সংগ্রামে লড়তে রাজি। কিন্তু রাজনীতিতে আর লড়তে চান না চাওয়ালা চিন্টু ভাই। -নিজস্ব চিত্র