স্বস্তিনাথ শাস্ত্রী, ক্যানিং: একদিকে ক্যানিং মহকুমা শহরকে যখন পুরসভায় উন্নীত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিধায়ক, তখন মাত্র দিন দুয়েকের টানা বর্ষণে শহরের একাধিক এলাকা ভেসে গেল। শহরের পুরনো বাসিন্দারা বলছেন, স্মরণাতীত কালে ক্যানিং শহর এইভাবে জলমগ্ন হয়নি। ক্যানিং-বারুইপুর রোড বা রাজ্যসড়ক-১ এর দু’ধারের সমস্ত এলাকায় প্রায় দু’দিন ধরে জল দাঁড়িয়ে ছিল। সঞ্জয়পল্লি, হসপিটালপাড়া, থুমকাটি, দিঘিরপাড়, গার্লসস্কুলপাড়া, মিঠেখালি দাসপাড়া, ঘোষপাড়া সহ একাধিক এলাকায় রাস্তা তো জলমগ্ন ছিলই, এমনকী প্রচুর বাড়িতেও জল ঢুকে গিয়েছে। বহু পুকুর ভেসে গিয়েছে। অনেকে পুকুরে মাছ ছেড়েছিলেন। সেই মাছ রাস্তায় উঠে এসেছে। রামমোহনপল্লি এবং সঞ্জয়পল্লির বহু বাড়িতে শুক্রবার সকালেও জল দাঁড়িয়েছিল। একই ছবি মাতলা-২ অঞ্চলেরও।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্তদপ্তরের এক বাস্তুকার বললেন, এখনই সমস্যার সমাধান না করলে আগামী দিনে ক্যানিংয়ের অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে। মিঠেখালির বাসিন্দা দীপক পৈলান বললেন, তাঁদের বাড়ির উঠোনে একহাঁটু জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। টানা একদিন সেই জল নামেনি। ক্যানিংয়ে এরকম জল দাঁড়াতে তিনি কখনও দেখেননি। 
কিন্তু দু’দিনের টানা বর্ষণেই কেন এই বানভাসি অবস্থা শহরের? জানা গেল, শহরের নিকাশি ব্যবস্থা পুরোপুরি বেহাল হয়ে গিয়েছে, এবং তা হয়েছে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের জন্য। মাতলা নদীর ধারে অবস্থিত হওয়ায় এবং এলাকায় একাধিক নিচু জমি, জলা এবং রাস্তার ধারে নয়ানজুলি থাকায় এতদিন বর্ষার জল নেমে যেতে কোনও অসুবিধে হতো না। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে নিচু জমি এবং জলা ভরাট করে বহু বাড়ি উঠছে, আর তা হয়েছে নিকাশির কথা না ভেবেই। সমস্যা গভীর হয়েছে রাজ্য সড়কের দু’ধারের নয়ানজুলি জবরদখল হয়ে যাওয়াতে। বহু জায়গায় নয়ানজুলি বুজিয়ে দোকান, শোরুম, এমনকী পাকা দোতলা বাড়িও হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে জল বেরনোর পথ বন্ধ। তাছাড়া থুমকাটির কাছে যে জল বেরনোর গই ছিল, সেটিও পলি পড়ে বুজে এসেছে। তার উপর তৈরি হয়েছে দোকানঘর। ক্যানিং হসপিটাল মোড় থেকে রায়বাঘিনীর দিকে যে রাস্তা গিয়েছে, সেখানেও নয়ানজুলি বুজিয়ে দোকানপাট, বাড়িঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া ক্যানিং সিনেমা হল রোডের কাজ অসমাপ্ত হয়ে পড়ে থাকায় তার দু’দিকের নিকাশি নালাগুলিও বন্ধ। সব মিলিয়ে ক্যানিংবাসীর জলযন্ত্রণা চরমে।
কী বলছে প্রশাসন? ক্যানিং-১ ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর দাস বললেন, যত দ্রুত সম্ভব তিনি এসডিও’র পরামর্শ নিয়ে পূর্তদপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। রাস্তার দু’ধারের নিকাশি নালা নিয়ে পূর্তদপ্তর কী ভাবনাচিন্তা করছে, তার খোঁজ নেবেন। ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস নয়ানজুলি জবরদখল হওয়ার বিষয়টিকে মেনে নিয়ে বলেছেন, ক্যানিং বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরনো বিডিও অফিস পর্যন্ত দু’ধারে পাকা হাইড্রেন অনেকদিন আগেই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু পুরনো বিডিও অফিসের পর থেকে রাস্তার দু’ধার জবরদখল হয়ে থাকায় হাইড্রেন করার কাজ থমকে গিয়েছে। তিনি ওই এলাকার জবরদখলকারী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এর সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা করবেন।