গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
এই গ্রামে প্রায় ৮০টি পরিবারের বাস। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কপোতাক্ষ নদী। কচুরিপানায় মুখ ঢেকে থমকে গিয়েছে সে। তবু নদীতে ঘেরা গ্রামটি ব-দ্বীপের মতো। গ্রামে প্রবেশের মুখে বিএসএফের চেকপোস্ট। আর রাস্তার পাশে রয়েছে সীমানা নির্ধারণকারী পিলার। তার এপাশে ভারত। ওপাশে বাংলাদেশ। সেখানে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভিটে সাগরদাঁড়ি গ্রাম। এছাড়াও রয়েছে কাবিলপুর, সাজাদপুর, ঢেঁকিপোতা গ্রাম। এই অঞ্চলে দু’দেশের মাঝখানে নেই কোনও কাঁটাতারের বেড়া। নদীর হাঁটু জল পেরিয়ে অনায়াসেই চলে আসা যায় এদেশে। ওদেশের মানুষের সঙ্গে এপারের বাসিন্দাদের সকাল হলেই দেখা হয়। পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ মেলে না।
লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দারা মূলত কৃষিজীবী। বাজার-হাট বা যে কোনও প্রয়োজনে তাঁদের স্থানীয় বয়রা বাজার এবং প্রশাসনিক কাজে বাগদায় আসতে হয়। ঝক্কি সেখানেই। গ্রামের বাইরে বাসিন্দাদের বেরতে গেলে বিএসএফের চেকপোস্টে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। কখনও কখনও সচিত্র পরিচয়পত্রও জমা রাখতে হয়। পুরোটাই জওয়ানদের মর্জির উপর নির্ভর করে। আবার সব কাজ সারতে হয় দিনের আলো থাকতে থাকতে। কারণ সন্ধ্যা ৬টার আগে বাসিন্দাদের গ্রামে ঢুকতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয় না। বাড়িতে কোনও আত্মীয় আসার কথা থাকলে আগে থেকে জওয়ানদের জানিয়ে রাখতে হয়। বাড়ির মালিক বা পরিবারের কোনও সদস্যের উপস্থিতিতে আত্মীয়স্বজনের লক্ষ্মীপুর গ্রামে ঢোকার অনুমতি মেলে। এমনকী তিনদিনের বেশি সময় আত্মীয়রা বাড়িতে থাকলে তা আবারও বিএসএফ জওয়ানদের জানাতে হয়। লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা এক যুবক বলেন, জওয়ানদের বেঁধে দেওয়া নিয়মকানুনে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। কেন এই সমস্যা? বাসিন্দাদের কথায়, এই গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে কাঁটাতার দেওয়া যায় না। কারণ এই এলাকায় কাঁটাতার লাগাতে হলে কারও বাড়ির একাংশ বাংলাদেশে, বাকিটা এদেশে পড়বে। এই জটিলতায় শুধু পিলার দিয়েই ভাগ করা হয়েছে দু’দেশকে। তাই অনুপ্রবেশ রুখতে নজরদারি বেশি। তার দাম চোকাতে হয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বয়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অসিত মণ্ডল বলেন, শীতকালে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সময়টা যদি ৬টার পরিবর্তে ৮টা করা হয়, তাহলে ভালো হয়। আসলে এই গ্রামের দুর্দশা নতুন নয়। কিন্তু তাতে একটু স্বস্তি মিললে ভালো হতো। আসলে এই গ্রামের মানুষজন নিজভূমেই পরবাসী। কাঁটাতার নেই। সীমান্ত ভাগ করেছে এই লোহার পিলার।