বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এই নামে অবশ্য মাম্পি-বুদোরা তাঁকে চেনে না। পথিকৃৎ তাদের প্রিয় ‘রোলকাকু’। দমদম ছাতাকলেও এমনই এক ‘রোলকাকু’ আছেন। পথিকৃৎ তাঁর কাছ থেকেই এই কাজের প্রেরণা পান। বছর কয়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি পোস্টে প্রথম দেখা যায় দমদমের এই বাসিন্দাকে। খাবারের হোম ডেলিভারি সার্ভিসের ‘ক্যানসেলড’ অর্ডার পথশিশুদের খাওয়াচ্ছেন। শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসে যায় ফোনের ইনবক্স। কিন্তু তা ছিল স্রেফ ছোট্ট এক অধ্যায়।
বছর কয়েক আগে অনাহারের শৃঙ্খল থেকে পথশিশুদের মুক্ত করার স্বপ্ন দেখে পথ চলার সূত্রপাত। দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু হওয়া সেই স্বপ্নের দৌড় আজ শহরের গণ্ডি পেরিয়ে প্রত্যন্ত সুন্দরবনের মাটি ছুঁয়েছে। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘ স্বীকৃত ‘কর্মবীর’ সম্মানে রাজ্যের তৃতীয় বাসিন্দা হিসেবে ভূষিত হন পথিকৃত্। তাঁর তৈরি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘হেল্প’ আজ ভারত সরকারের ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র ‘প্রোজেক্ট ফুড শেয়ারিং অ্যালায়েন্সে’র সদস্য। বাংলায় একমাত্র তাদের কাছেই এসেছে এই স্বীকৃতি।
এই সবের মধ্যেই দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পথিকৃৎ তৈরি করেছে বাবাই, সেলিমদের। ওদের ঠিকানা রেল লাইনের ধারের কোনও ঝুপড়ি বা ব্যস্ত শহরের ফুটপাত। যেখান থেকে শিশু শ্রমের পথ বেছে নেওয়াই নিয়তি। কিন্তু, পথিকৃৎ তা হতে দেননি। তাদের দমদমের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে ভর্তি করানো, নিজে ও প্রাইভেট টিউটর দিয়ে নিয়মিত পড়ানো, বই খাতা কিনে দেওয়ার মত উদ্যোগ একা হাতে সামলেছেন। দশজনেরও কম পথশিশুকে নিয়ে শুরু হয়েছিল সেই উদ্যোগ। আর আজ শুধু দমদমেই ৪০ জনের সমস্ত শিক্ষার খরচ বহন করছেন ‘ফুড ডেলিভারি বয়’।
২০১৮ সালে এই কাজের জন্যেই গতে বাঁধা পুরসভার চাকরি ছেড়ে ডেলিভারির কাজ শুরু করেন পথিকৃৎ। তার আগে ‘হেল্প’ শুরু হলেও স্বল্প রোজগার বড় কর্মযজ্ঞের পথে অন্তরায় হয়ে ওঠে। তবে সেই গ্রুপের বেশ কিছু সদস্যর সঞ্চিত অর্থ দিয়ে গত বছর থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে শিক্ষার প্রসারের। কুলতলি ব্লকের কৈলাসনগর, পাকুড়তলি, কেল্লা, ডোঙ্গাজোড়ার মতো এলাকার ২১০ জন শিশুর শিক্ষার খরচ বহন করছেন তাঁরা। পথিকৃত্ বলেন, ‘অর্থাভাবে আমার উচ্চ মাধ্যমিকের পরই পড়াশোনা থেমে যায়। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না। ওদেরকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চাই।’ তাই এখানেই থামতে রাজি নন ‘ফুড ডেলিভারি বয়’। তাঁর লক্ষ্য, ‘হেল্প’-কে রাজ্যের আরও অন্যান্য জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া। হাজার পথশিশুর ‘পথিকৃৎ’-ই যে হতে চান তিনি।