অভিষেক পাল, কল্যাণী: মাতৃগর্ভে থাকা শিশুকে কৃত্রিমভাবে পুষ্টি জুগিয়ে বড় করার পর বিরল অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করালেন কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে ও জেএনএম হাসপাতালের এক চিকিৎসক। ওই মহিলার খাদ্যনালীতে অ্যাসিডের ক্ষত থাকায়, এবং তা ঠিকমতো কাজ না করার ফলে তিনি মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারেন না। জেজোনসটমি বা এক ধরনের বাইপাস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁকে তরল জাতীয় কিছু খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। কল্যাণী শহর এলাকার বাসিন্দা বছর ২৬-এর ওই মহিলার বিগত ছ’মাস ধরে চিকিৎসা চলার পর অবশেষে গত সোমবার তিনি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। বিরল অস্ত্রোপচার করে এই সাফল্য পেয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক মৃগাঙ্ক মৌলি সাহা। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন আরও ছয় চিকিৎসক। মহিলা খাদ্যগ্রহণের এই সমস্যা নিয়ে তিন মাসের গর্ভবতী অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসকদের জানান, তাঁর শরীরের অবস্থা অনুযায়ী এই প্রেগন্যান্সি তিনি রাখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে আছেন। তাঁর ভয় ছিল, যেহেতু তিনি মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারেন না, তাই তাঁর গর্ভে থাকা শিশুটি কীভাবে পুষ্টি পেয়ে বড় হবে বা বড় হলেও শিশুটির মধ্যে কোনও জটিলতা আসবে কি না। এমত অবস্থায় গর্ভপাত করে নিতেও চাইছিলেন তিনি। রোগীর এই আশঙ্কার কথা শোনার পর চিকিৎসক মৃগাঙ্ক মৌলি সাহা বিভিন্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঝুঁকি সত্ত্বেও ওই গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর সপ্তাহে তিনদিন করে মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ইন্টারমিডেট নিউট্রেশন থেরাপিতে শিরার মাধ্যমে ‘পার এনটারাল নিউট্রেশন’ বা নিউট্রেশন ইনজেকশন দেওয়া হতো। যেহেতু তিনি মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারেন না, তাই তাঁর শরীরে এই পদ্ধতিতে পুষ্টিকর খাদ্যরস দেওয়া শুরু হয়। এছাড়াও প্রোটিন প্রয়োগ করা হয়েছে গর্ভের শিশুটিকে বড় করার জন্যেও। সাধারণত যাঁরা অপুষ্টিতে ভোগেন বা গুরুতর অসুস্থ হয়ে আই সি সি ইউ-তে ভর্তি থাকেন, তাঁদের জন্য এই ধরনের পদ্ধতির ব্যবহার হয়। চিকিৎসকের দাবি, প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে সফলভাবে এই পদ্ধতির ব্যবহার করা বিরল ঘটনা।
মৃগাঙ্কবাবু বলেন, মহিলা মুখে কিছু খেতে পারেন না বলে বিষয়টি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল আমাদের কাছে। আমরা চেষ্টা করেছি। আর সেই চেষ্টার ফলেই উনি মা হতে পেরেছেন। এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার আমাদের রাজ্যে তো বটেই, দেশেও বিরল বলে আমার ধারণা। অন্যদিকে, ওই মহিলার স্বামী বলেন, আমার স্ত্রীর খাদ্যনালীর সমস্যা থাকায় মুখ দিয়ে কিছু খেতে পারতেন না। এখানকার ডাক্তারবাবুরা কৃত্রিমভাবে ওঁকে খাদ্য দিয়ে চিকিৎসা করেছেন। ওঁদের জন্য পুরো ব্যবস্থাটা সফল হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়ে আমি আপ্লুত। চিকিৎসকদের কাছেও কৃতজ্ঞ।