নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: চিত্তরঞ্জনে রেলকর্মী খুনের চারদিন পরেও কারণ নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিস। তবে, খুনের পিছনে ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতীদের যুক্ত থাকার সম্ভাবনাও পুলিস উড়িয়ে দিচ্ছে না। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পেরেছে, দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত আনন্দকুমার ভাট সুদের কারবার করতেন। তাঁর কারবার ছড়িয়েছিল ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। তাই টাকা নিয়ে বিবাদের জেরে এই ঘটনা কি না তা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। এই অবস্থার মধ্যে শহরের নিরাপত্তা চেয়ে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর ওষুধ কিনতে গিয়ে আনন্দবাবু রাতে বাড়ি ফেরেননি। শনিবার সকালে চিত্তরঞ্জনের কর্নেল সিং পার্কের কাছে নিজের গাড়িতে তাঁর গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আনন্দবাবুর গৃহশিক্ষক হিসেবে সুনাম ছিল। পুলিস জানতে পেরেছে, তিনি যেমন চড়া সুদে অন্যকে টাকা দিতেন, তেমনই ব্যবসায় খাটানোর জন্য অনেকের কাছ থেকে ধারও নিয়েছিলেন। তাই এই খুনের পিছনে টাকা খাটানোর বিষয়টিও জড়িয়ে থাকতে পারে। ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম সহ বিভিন্ন জায়গায় ‘ফান্ড খেলা’ হয়। সেখানে টাকা লাগানো নিয়ে আনন্দবাবু কোনও বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন কি না, সেটাও পুলিস খতিয়ে দেখছে। চিত্তরঞ্জনে অপরাধের ঘটনায় প্রায়ই ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এক্ষেত্রেও সেই সম্ভাবনা রয়েছে যথেষ্ট। তাই ভিন রাজ্যের লিঙ্কটিও পুলিস মাথায় রাখছে। পুলিস কমিশনার অজয়কুমার ঠাকুর বলেন, আমরা ঘটনার দ্রুত কিনারার চেষ্টা করছি।
জুয়া, সাট্টা থেকে নানা ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই চিত্তরঞ্জনে আন্তঃরাজ্য চক্র সক্রিয়। তাই এই সীমান্ত শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। মোটা বেতনের কর্মীদের মধ্যেও আরও টাকা কামানোর প্রবণতা বৃদ্ধি বাড়ির মহিলাদের গভীর চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। বহু ক্ষেত্রেই বাড়ির মহিলারা স্বামীর এই ধরনের কাজকর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেন না। বড় কোনও ঘটনার ঘটে যাওয়ার পর তাঁরা বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন আর কিছুই করার থাকে না।
বাড়তি টাকার নেশায় অনেকেই ভুল পথে পা বাড়চ্ছে। তাতে এলাকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি জড়িয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। আইএনটিইউসি নেতা নেপাল চক্রবর্তী বলেন, আমরা ঘটনার পর‌ই থানায় ডেপুটেশন দিয়েছি। চিত্তরঞ্জনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সিটু নেতা রাজীব গুপ্ত বলেন, অবিলম্বে রেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিসের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। খুনের ঘটনার দ্রুত কিনারা করে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তৃণমূল নেতা শ্যামল গোপ বলেন, বহু মানুষ আনন্দবাবুকে টাকা ধার দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এখানে সুদের রমরমা কারবার রয়েছে। পুলিস ও রেল কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা দরকার।